পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سوی8b সত্য হচ্ছেন নিয়মস্বরূপ। তাকে মানতে হলেই তার সমস্ত বাধন মানতেই হয়। যা কিছু সত্য অর্থাৎ য কিছু আছে এবং থাকে তা কোনোমতেই বন্ধনহীন হতে পারে না-ত কোনো নিয়মে আছে বলেই আছে। ষে-সত্যের কোনো নিয়ম নেই, বন্ধন নেই, সে তো স্বপ্ন, সে তো খেয়াল , সে তো স্বপ্নের চেয়েও মিথ্যা, খেয়ালের চেয়েও শূন্ত । ধিনি পূর্ণ সত্যস্বরূপ তিনি অন্তের নিয়মে বন্ধ হন না তার নিজের নিয়ম নিজেরই মধ্যে। তা যদি না থাকে, তিনি আপনাকে যদি আপনি বেঁধে না থাকেন, তবে তার থেকে কিছুই হতে পারে না, কিছুই রক্ষা পেতে পারে না। তবে উন্মত্ততার তাণ্ডবনৃত্যে কোনো কিছুর কিছুই ঠিকানা থাকত না । কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সত্যের রূপই হচ্ছে নিয়ম - একেবারে অব্যর্থ নিয়মতার কোনো প্রান্তেও লেশমাত্র ব্যত্যয় নেই। এইজন্তেই এই সত্যের বন্ধনে সমস্ত বিশ্বব্রন্ধাও বিধৃত হয়ে আছে, এইজন্যই সত্যের সঙ্গে আমাদের বুদ্ধির যোগ আছে এবং তার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ নির্ভর আছে । গাছের যেমন গোড়াতেই দরকার শিকড় দিযে ভূমিকে আঁকড়ে ধরা আমাদেরও তেমনি গোড়ার প্রয়োজন হচ্ছে স্থূল সূক্ষ্ম অসংখ্য শিকড় দিয়ে সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠালাভ করা । আমরা ইচ্ছা করি না করি, এ সাধনা আমাদের করতেই হয় । শিশু বলে আমি পা ফেলে চলব ; কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত বহু সাধনায় সে চলার নিয়মটিকে পালন করে ভারাকর্ষণের সঙ্গে আপন করতে না পারে ততক্ষণ তার আর উপায় নেই—শুধু বললেই হবে না, আমি চলব। এই চলবার নিয়মকে শিশু যখনই গ্রহণ করে এ-নিয়ম আর তখন তাকে পীড়া দেয় না । শুধু যে পীড়া দেয় না তা নয় তাকে আনন্দ দেয় ; সত্য-নিয়মের বন্ধনকে স্বীকার করবামাত্রই শিশু নিজের গতিশক্তিকে লাভ করে আলোদিত হয়। এমনি করে ক্রমে ক্রমে যখন সে জলের সত্য মাটির সত্য আগুনের সত্যকে সম্পূর্ণ মানতে শেখে তখন যে কেবল তার কতকগুলি অসুবিধা দূর হয় তা নয়, জল মাটি আগুন সম্বন্ধে তার শক্তি সফল হয়ে উঠে তাকে আনন্দ দেয়। l শুধু বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নয়, সমাজের সঙ্গেও শিশুকে সত্য সম্বন্ধে যুক্ত হয়ে ওঠবার জন্তে বিস্তর সাধনা করতে হয়, তাকে বিস্তর নিয়ম স্বীকার করতে হয়— তাকে অনেক রকম আবদার থামাতে হয়, অনেক রাগ কমাতে হয় –নিজেকে অনেক রকম করে বাঁধতে হয় এবং অনেকের সঙ্গে বাধতে হয় । যখন এই বন্ধন