পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& e 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী পার করো সেই ষে সেদিন ভাঙামেলার ভোর রাত্রে নানা হাসিতামাশা-গোলমাল-তুচ্ছকথার মাঝখানে গান উঠেছিল—হরি আমায় পার করে - সে আমি স্থূলতে পারছি নে, সে আমাকে আজও বিক্ষিত করছে। এই ষে কথাটা মানুষ এতদিন থেকে বলে আসছে, আমায় পার করে, এটা একটা আশ্চর্ষ কথা। তার এই আকাঙ্ক্ষাটা আপনাকে আপনি সম্পূর্ণ জানে কি না তাও বুঝতে পারি নে। যদি কোনো সাধক সংসারের সমস্ত চেষ্টা ছেড়েছুড়ে দিয়ে তার সাধন-সমূত্রের কুলে এসে দাড়িয়ে বলেন, হে সিদ্ধিদাতা, তুমি আমাকে সিদ্ধির কুলে পার করে দাও তবে তার মানে বুঝতে পারি। কিন্তু যার সম্মুখে কোনো উদ্বেগু নেই, কোনো সাধনা নেই—তার নাবিক কোথায়, তার সমুদ্র কোথায়, সে কী পার হতে চাচ্ছে ? তার এপারটাই বা কোথায় আর ওপারটাই বা কোথায় ? আমরা আমাদের কাজকর্মের ভিড়ের মাঝখানে থেকেই বলছি, হরি পার করো ; গাড়োয়ান যখন গাড়ি চালাচ্ছে, বলছে পার করো ; মুদি যখন চালডাল ওজন করছে, বলছে পার করে । মনে ক’রো না তারা বলছে আমাদের এই কর্ম হতেই পার করে । তারা কর্মের মধ্যে থেকেই পার হতে চাচ্ছে সেইজন্যে গান গাবার সময় তাদের কাজ কামাই যাচ্ছে না । o হে আনন্দসমূদ্র, এপারও তোমার ওপারও তোমার। কিন্তু একটা পারকে যখন আমার পার বলি তখন ওপারের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে । তখন সে আপনার সম্পূর্ণতার অনুভব হতে ভ্ৰষ্ট হয়, ওপারের জন্তে ভিতরে ভিতরে কেবলই তার প্রাণ কাদতে থাকে। আমার পারের আমিটি তোমার পারের তুমির বিরহে বিরহিণী। পার হবার জন্তে তাই এত ভাকাডাকি । এইটে আমার ঘর বলে আমি-লাকটা দিনরাত্রি খেটে মরছে, যতক্ষণ না বলতে পারছে এইটে তোমারও স্বর, ততক্ষণ তার যে কত দাহ কত বন্ধন কত ক্ষতি তার সীম নেই—ততক্ষণ ঘরের কাজ করতে করতে তার অন্তরাত্মা কেঁদে গাইতে থাকে, হরি আষায় পার করে । যখনই সে আমার ঘরকে তোমার ঘর করে তুলতে পারে তখনই সে বরের মধ্যে থেকে পার হয়ে যায়। আমার কর্ম মনে করে আমি লোকটা রাত্রিনি যখন হালক্ষণগ করে বেড়ায়, তখন সে কত আঘাত পায় আর কত আঘাত করে, তখনই