পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতক 8○ আমার বক্ষ সেইখানে এক-তালে, উঠত বেজে তারি খেলার অশাস্ত গোলমালে । বৃষ্টিধারা সাথে নিয়ে মোদের দ্বারে ঝড় দিত যেই হানা কাটিয়ে দিয়ে বিজুর মায়ের মানা অট্ট হেসে আমরা দোহে মাঠের মধ্যে ছুটে গেছি উদাম বিদ্রোহে । পাকা আমের কালে তারে নিয়ে বসে গাছের ডালে দুপুরবেলায় খেয়েছি আম করে কাড়াকাড়ি— তাই দেখে সব পাড়ার লোকে বলে গেছে, “বিষম বাড়াবাড়ি ।” বারে বারে আমার লেপার ব্যাঘাত হত, বিজুর মা তাই রেগে বলত তারে “দেখিস নে তোর বাবা আছেন কাজে ?” বিজু তখন লাজে বাইরে চলে যেত । আমার দ্বিগুণ ব্যাঘাত হত লেখাপড়ায় ; মনে হত, “টেবিলপান কেউ কেন না নড়ায় ।” ভোর না হতে রাতি সেদিন যখন বিজু গেল ছেড়ে খেলা, ছেড়ে খেলার সাথি, মনে হল এতদিনে বুড়োবয়সখানা পুরল ষোলো আন । কাজের ব্যাঘাত হবে না আর কোনোমতে, চলব এবার প্রবীণতার পাক। পথে । লক্ষ্য করে বৈতরণীর ঘাট, গম্ভীরতার স্তম্ভিত ভার বহন করে প্রাণটা হবে কাঠ । সময় নষ্ট হবে না আর দিনে রাতে দৌড়োবে মন লেখার খাতার শুকনো পাতে পাতে,— বৈঠকেতে চলবে অালোচনা কেবলি সৎপরামর্শ কেবলি সঙ্গবিবেচন।