পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী আরাম—সেটা হচ্ছে বিশাল বিশ্বপ্রকৃতির মূলগত আরাম – যে আরামের খামল মূর্তি ও নির্বাক প্রকাশ আমরা শাখাপন্নবিত নিস্তদ্ধ বনস্পতির মধ্যে দেখতে পাই। : এই যেমন আমাদের প্রাণকে প্রতি রাত্রে প্রকৃতির হাতে সমর্পণ করে দিয়ে আমরা প্রভাতে নূতন প্রাণচেষ্টার জন্তে পুনরায় প্রস্তুত হয়ে উঠি- তেমনি দিনের মধ্যে অন্তত একবার করে আমাদের আত্মাকে পরমাত্মার হাতে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করে দেবার প্রয়োজন আছে—নইলে আবর্জনা জমে ওঠে, ভাঙাচোরাগুলো সারে না, তাপ বাড়তেই থাকে "কাম ক্রোধ লোভ প্রভৃতি প্রবৃত্তিগুলো তাদের প্রয়োজনকে অতিক্রম করে অন্তরে বাহিরে বিদ্রোহ রচনা করে। সেইজন্তে প্রভাতে উপাসনার সময়ে আমাদের সকল চেষ্টাকে ক্ষাস্ত করে সব রিপুকে শান্ত করে কিছুকালের জন্তে পরমাত্মার সঙ্গে আমাদের আপনার পরিপূর্ণ সামঞ্জস্ত স্থাপন করে নেওয়া দরকার – সেই সময়ে আমাদের অন্তরের মধ্যে পরমাত্মাকে সম্পূর্ণ পথ ছেড়ে দিতে হবে ; তাহলে সেই একান্ত আত্মবিসর্জনের সুগভীর শান্তির সুযোগে আমাদের মনের ব্যাধির মধ্যে স্বাস্থ্যের সঞ্চার হবে, সমস্ত সংকোচন প্রসারিত হয়ে যাবে এবং হৃদয়গ্রন্থিগুলি শিথিল হয়ে আসবে। তার পরে উপাসনাশাস্ত সেই আমাদের অন্তরপ্রকৃতি যখন সংসারে বিচিত্রের মধ্যে, বহুর মধ্যে বিভক্ত হয়ে ব্যাপ্ত হয়ে নানা আকারে প্রকারে আত্মোপলব্ধিতে প্রবৃত্ত হবে তখন সকল কাজে সে গম্ভীরভাবে পবিত্রভাবে নিযুক্ত হতে পারবে, তখন কথায় কথায় চতুর্দিককে সে আঘাত দিতে থাকবে না, তখন তার সমস্ত চেষ্টার মধ্যে শাস্তি থাকবে । বিশাল বিশ্বের বিচিত্র ব্যাপারের মধ্যে যেমন একটি আশ্চর্য সামঞ্জস্ত আছে, যেটি থাকাতে সমস্ত চেষ্টার মৃতি শাস্ত ও শক্তির মৃতি সুন্দর হয়ে উঠেছে – যেটি থাকাতে বিশ্বজগং একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাশাল অথবা প্রকাও কারখানাম্বরের মতো কঠোর আকার ধারণ করে নি – আমাদের চেষ্টার মধ্যে সেই সামঞ্জত থাকবে, আমাদের কর্মের মধ্যে সেই সৌন্দর্ধ ফুটে উঠবে। ঈশ্বর যেমন করে কাজ করেন, কিছুক্ষণ র্তার কাছে আমাদের সমস্ত অহংকারটি নিবৃত্ত করে দিয়ে তার সেই পরম সুন্দর কৌশলটি শিখে নেব। আপনাকে তার চরণপ্রান্তে উপস্থিত করে দিয়ে বলব, জননী, প্রাতঃকালে এঁর উপরে তোমার নিপুণ হস্তটি একবার স্পর্শ করে দাও —তাহলে গতকল্যকার সংসারের জাৰাতে এর উপরে যে সকল ছিন্নতা এসেছে তা সমস্তই সেরে যাবে। জামরা যদি প্রতিদিন দিবাসারভে র্তার পবিত্র হন্তের স্পর্শ ললাটে গ্রহণ করে নিয়ে ঘাই এবং সে কথা যদি স্বরণ রাখি তবে ললাটকে আর ধূলিতে লুষ্ঠিত করতে পারব না। এই উপাসনার স্বরটি ধেন তানপুরার মুরের মতো আমাদের মধ্যে সমস্তদিন নিয়তই