পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকৃেতন ese সঙ্গে একে জড়িয়ে ফেল নি। কোন নীহারিকার জ্যোতির্মর বাস্পনির্বর থেকে অণুপরমাণুকে চালন করে কত পুষ্টি, কত পরিবর্তন, কত পরিণতির মধ্যে দিয়ে এই আমিকে আজ এই শরীরে ফুটিয়ে তুলেছ। তোমার সেই অনাদিকালের সঙ্গ আমার এই দেহটির মধ্যে সঞ্চিত হয়ে আছে। অনাদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত অনন্ত স্বষ্টির মাঝখান দিয়ে একটি বিশেষ রেখাপাত হয়ে এসেছে সেটি হচ্ছে এই আমির রেখা— সেই রেখাপখে তোমার সঙ্গে আমি বরাবর চলে এসেছি। সেই তুমি আমার অনাদি পথের চালক, অনন্ত পথের অদ্বিতীয় বন্ধু তোমাকে আমার সেই একলা বন্ধুরূপে আমার জীবনের মধ্যে উপলব্ধি করব। আর কোনে কিছুই তোমার সমান না হ’ক, তোমার চেয়ে বড়ো না হ’ক । আর আমার এই যে সাধারণ জীবন যা নানা ক্ষুধাতৃষ্ণ চিম্ভাচেষ্টা দ্বারা আমি সমস্ত তরুলত পশুপক্ষীর সঙ্গে একত্রে মিলে ভোগ করছি সেইটেই নানাদিক দিয়ে প্রবল হয়ে না ওঠে, আমাতে তোমার ষে একটি বিশেষ স্পর্শ, বিশেষ ক্রিয়, বিশেষ আনন্দ অনন্তকালের মুহৃদ ও সারথিরূপে রয়েছে তাকে যেন আচ্ছন্ন করে না দাড়ায় । আমি ৰেখানে জগতের সামিল সেখানে তোমাকে জগদীশ্বর বলে মানি, তোমার সব নিয়ম পালন করবার চেষ্টা করি, না পালন করলে তোমার শাস্তি গ্রহণ করি—কিন্তু আমিরূপে তোমাকে আমি আমার একমাত্র বলে জানতে চাই । সেইখানে তুমি আমাকে স্বাধীন করে দিয়েছ—কেননা স্বাধীন না হলে প্রেম সার্থক হবে না, ইচ্ছার সঙ্গে ইচ্ছা মিলবে না, লীলার সঙ্গে লীলার যোগ হতে পারবে না। এইজন্তে এই স্বাধীনতার আমি-ক্ষেত্রেই আমার সব দুঃখের চেয়ে পরম দুঃখ তোমার সঙ্গে বিচ্ছেদ অর্থাৎ অহংকারের দুঃখ, আর, সব মুখের চেয়ে পরম সুখ তোমার সঙ্গে মিলন, অর্থাৎ প্রেমের মুখ। এই অহংকারের দুঃখ কেমন করে ঘুচবে সেই ভেবেই বুদ্ধ তপস্ত করেছিলেন এবং এই অহংকারের দুঃখ কেমন করে ঘোচে সেই জানিয়েই খ্ৰীস্ট প্রাণ দিয়েছিলেন। হে পুত্র হতে প্রিয়, বিত্ত হতে প্রিয়, হে অন্তরতম প্রিয়তম, এই আমিনিকেতনেই যে তোমার চরমলীলা । সেইজন্তেই তো এইপানেই এত নিদারুণ দুঃখ এবং সে দুঃখের এমন অপরিসীম অবসান-—সেইজন্তেই তো এইখানেই মৃত্যু—এবং অমৃত সেই স্বস্তুর বক্ষ বিীর্ণ করে উৎসারিত হচ্ছে। এই দুঃখ ও মুখ, বিচ্ছেদ ও মিলন, অমৃত ও মৃত্যু, এই তোমার দক্ষিণ ও বাম দুই বাছ, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ধরা দিয়ে যেন বলতে পারি, আমার সব মিটেছে, আমি আর কিছুই চাই নে । ১৬ পৌষ ১৩১৫