পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ベ রবীন্দ্র-রচনাবলী সৌন্দর্য ঈশ্বর সত্যং । তার সত্যকে আমরা স্বীকার করতে বাধ্য। সত্যকে এতটুকুমাত্র স্বীকার না করলে আমাদের নিষ্কৃতি নেই। সুতরাং অমোঘ সত্যকে আমরা জলে স্থলে আকাশে সর্বত্র দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তিনি তো শুধু সত্য নন—তিনি “আনন্দরূপমমৃতং।” তিনি আনন্দরূপ, অমৃতরূপ। সেই তার আনন্দরূপকে দেখছি কোথায় ? আমি পূর্বেই আভাস দিয়েছি আনন্দ স্বভাবতই মুক্ত। তার উপরে জোর খাটে না, হিসাব চলে না । এই কারণে আমরা ষেদিন আনন্দের উৎসব করি সেদিন প্রতিদিনের বাধা নিয়মকে শিথিল করে দিই—সেদিন স্বার্থকে শিথিল করি, প্রয়োজনকে শিথিল করি, আত্মপরের ভেদকে শিথিল করি, সংসারের কঠিন সংকোচকে শিথিল করি—তবেই ঘরের মাঝখানে এমন একটুখানি ফাকা জায়গা তৈরি হয় যেখানে আনন্দের প্রকাশ সম্ভবপর হয়। সত্য বাধনকেই মানে, আনন্দ বাঁধন মানে না । এইজন্য বিশ্বপ্রকৃতিতে সত্যের মূর্তি দেখতে পাই নিয়মে, এবং আনন্দের মূর্তি দেখি সৌন্দর্ঘে। এইজন্ত সত্যরূপের পরিচয় আমাদের পক্ষে অত্যাবগুক, আনন্দরূপের পরিচয় আমাদের না হলেও চলে। প্রভাতে স্বৰ্বোদয়ে আলো হয় এই কথাট জানা এবং এটাকে ব্যবহারে লাগানো আমাদের নিতান্ত দরকার কিন্তু প্রভাত যে সুন্দর সুপ্রশাস্ত এটুকু না জানলে আমাদের কোনো কাজের কোনো ক্ষতিই হয় না । ' , জল স্থল আকাশ আমাদের নানা বন্ধনে বদ্ধ করছে কিন্তু এই জল স্থল আকাশে নানা বর্ণে গন্ধে গীতে সৌন্দর্বের ষে বিপুল বিচিত্র আয়োজন সে আমাদের কিছুতে বাধ্য করে না, তার দিকে না তাকিয়ে চলে গেলে সে আমাদের অরসিক বলে গালিও জেয় না | অতএব দেখতে পাচ্ছি, জগতের সত্যলোকে আমরা বন্ধ, সৌন্দর্ধলোকে আমরা স্বাধীন। সত্যকে যুক্তির দ্বারা অখণ্ডনীয়রূপে প্রমাণ করতে পারি, সৌন্দৰকে আমাদের স্বাধীন জানন্দ ছাড়া আর কিছুর দ্বারাই প্রমাণ করবার জো নেই। ষে ব্যক্তি ভূড়ি দিয়ে বলে “ছাই তোমার সৌন্দৰ” মহাবিশ্বের লক্ষ্মীকেও তার কাছে একেবারে চুপ করে যেতে হয়। কোনো আইন নেই, কোনো পেয়াদ নেই যার দ্বারা এই সৌম্বৰকে সে দায়ে পড়ে মেনে নিতে পারে।