পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন (EO কেবলমাত্রই পার্থক্য হত তাহলে জগৎ তো সমষ্টিরূপ ধারণ করত না । তাহলে অসংখ্য বিচ্ছিন্নতা এমনি বিচ্ছিন্ন হত যে কেবলমাত্র সংখ্যাস্থত্রেও তাদের একাকারে জানবার কিছুই থাকত না । ra به " " ، ، ، ، د অতএব এর মধ্যে আর একটি জিনিস আছে যা এই চিরন্তন পার্থক্যকে অতিক্রম করছে। সেটি কী ? সেটি হচ্ছে শক্তি। ঈশ্বরের শক্তি এই সমস্ত পার্থক্যের উপর কাজ করে একে এক অভিপ্ৰায়ে বাঁধছে। সমস্ত স্বতন্ত্র নিয়মবদ্ধ দাৰাবড়ের খুঁটির মধ্যে একই খেলোয়াড়ের শক্তি একটি এক-তাৎপর্যবিশিষ্ট খেলাকে অভিব্যক্ত করে তুলছে। i এইজস্তষ্ট তাকে ঋষির বলেছেন “কবিঃ”। কবি যেমন ভাষার স্বাতন্ত্র্যকে নিজের ইচ্ছার অধীনে নিজের শক্তির অস্থগত করে সুন্দর ছন্দোবিস্তাসের ভিতর দিয়ে একটি আশ্চর্ষ অর্থ উদ্ভাবিত করে তুলছে—তিনিও তেমনি “বহুধাশক্তি যোগাং বৰ্ণাননেকান্ধিহিতার্থোদধীতি” অর্থাৎ শক্তিকে বহুর মধ্যে চালিত করে বহুর সঙ্গে যুক্ত করে অনেক বর্ণের ভিতর থেকে একটি নিহিত অর্থ ফুটিয়ে তুলছেন—নইলে সমস্তই অর্থহীন হত । “শক্তিযোগাং” শক্তি যোগের দ্বারা । শক্তি একটি যোগ। এই যোগের দ্বারাই ঈশ্বর সীমাদ্বারা পৃথককৃত প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন - নিয়মের সীমারূপ পার্থক্যের মধ্যে দাড়িয়ে তার শক্তি দেশের সঙ্গে দেশাস্তরের, রূপের সঙ্গে রূপান্তরের, কালের সঙ্গে কালান্তরের বহুবিচিত্রসংযোগ সাধন করে এক অপূর্ব বিশ্বকাব্য স্বজন করে চলেছে। এমনি করে যিনি অসীম তিনি সীমার দ্বারাই নিজেকে ব্যক্ত করছেন, যিনি অকালস্বরূপ খণ্ডকালের দ্বারা তার প্রকাশ চলেছে। এই পরমাশ্চর্য রহস্তকেই বিজ্ঞানশাস্ত্রে বলে পরিণামবাদ । যিনি আপনাতেই আপনি পর্যাপ্ত তিনি ক্রমের ভিতর দিয়ে নিজের ইচ্ছাকে বিচিত্ররূপে মূর্তিমান করছেন–জগৎ-রচনায় করছেন, মানবসমাজের ইতিহাসে করছেন । g প্রকৃতির মধ্যে নিয়মের সীমাই হচ্ছে পার্থক্য, আর আত্মার মধ্যে অহংকারের সীমাই হচ্ছে পার্থক্য । এই সীমা যদি তিনি স্থাপিত না করতেন তাহলে তার প্রেমের লীলা কোনোমতে সম্ভবপর হত না। জীবাত্মার স্বাভয্যের ভিতর দিয়ে তার প্রেম কাজ করছে। র্তার শক্তির ক্ষেত্র হচ্ছে নিয়মবদ্ধ প্রকৃতি, জায় তার প্রেমের ক্ষেত্র হচ্ছে অহংকারবদ্ধ জীবাত্মা । এই অহংকারকে জীবাত্মার সীমা বলে তাকে তিরস্কার করলে চলবে না । জীবাত্মার এই অহংকারে পরমাত্মা নিজের খানদের মধ্যে সীমা স্থাপন করেছেন—নতুৰ তার আননের কোনো কৰ্ম থাকে না । •. . . . . . .