পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NLR রবীন্দ্র-রচনাবলী এই অহংকারে যদি কেবল পার্থক্যই সর্বপ্রধান হত তাহলে আত্মায় আত্মায় বিরোধ হুবার মতোও সংঘাত ঘটতে পারত না—আত্মার সঙ্গে আত্মার কোনো দিক থেকে কোনো সংস্পৰ্শই থাকতে পারত না । কিন্তু তার প্রেম সমস্ত আত্মাকে আত্মীয় করবার পথে চলেছে, পরস্পরকে সোজনা করে প্রত্যেক স্বাতন্ত্র্যের নিহিতার্থটিকে জাগ্রত করে তুলছে। নতুবা জীবাত্মার স্বাতন্ত্র্য ভয়ংকর নিরর্থক হত । 勵 এখানেও সেই আশ্চর্য রহস্ত। পরিপূর্ণ আনন্দ অপূর্ণের দ্বারাই আপনার আনন্দলীলা বিকশিত করে তুলছেন। বহুতর দুঃখ সুখ বিচ্ছেদ মিলনের ভিতর দিয়ে ছায়ালোকবিচিত্র এই প্রেমের অভিব্যক্তি কেবলই অগ্রসর হচ্ছে । স্বার্থ ও অভিমানের ঘাত প্রতিঘাতে কত আঁকা বাকী পথ নিয়ে, কত বিস্তারের মধ্যে দিয়ে, ছোটোবড়ো কত আসক্তি অমুরক্তিকে বিদীর্ণ করে জীবাত্মার প্রেমের নদী প্রেমসমূত্রের দিকে গিয়ে মিলছে। প্রেমের শতদল পদ্ম অহংকারের বৃস্ত আশ্রয় করে আত্ম হতে গৃহে, গৃহ হতে সমাজে, সমাজ হতে দেশে, দেশ হতে মানবে, মানব হতে বিশ্বাত্মায় ও বিশ্বাত্মা হতে পরমাত্মায় একটি একটি করে পাপড়ি খুলে দিয়ে বিকাশের লীলা সমাধান করছে । ২৩ পৌষ প্রকৃতি প্রকৃতি ঈশ্বরের শক্তির ক্ষেত্র, আর জীবাত্মা তার প্রেমের ক্ষেত্র একথা বলা হয়েছে। প্রকৃতিতে শক্তির দ্বারা তিনি নিজেকে ‘প্রচার করছেন, আর জীবাত্মায় প্রেমের দ্বারা তিনি নিজেকে ‘দান করছেন । অধিকাংশ মানুষ এই দুই দিকে ওজন সমান রেখে চলতে পারে না । কেউ বা প্রাকৃতিক দিকেই সাধনা প্রয়োগ করে, কেউ বা আধ্যাত্মিক দিকে । ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যেও এসম্বন্ধে ভিন্নতা প্রকাশ পায় । Çı প্রকৃতির ক্ষেত্রে যাদের সাধনা তারা শক্তি লাভ করে, তারা ঐশ্বৰ্ধশালী হয়, তারা রাজ্য সাম্রাজ্য বিস্তার করে। তারা অন্নপূর্ণার বরলাভ করে পরিপুষ্ট হয়। তারা সর্ববিষয়ে বড়ো হয়ে ওঠবার জন্তে পরম্পর ঠেলাঠেলি করতে করতে একটা খুব বড়ো জিনিস লাভ করে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে র্যারা শ্রেষ্ঠ তাদের শ্রেষ্ঠলাভ হচ্ছে ধর্মনীতি ।