পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՓՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী আজকে দেখি নব্যবঙ্গে শক্তিটা মোর ঢাকাই রইল, চাবিটা তার সঙ্গে । মনে হচ্ছে ময়নাপাখির খাচায় অদৃষ্ট তার দারুণ রঙ্গে ময়ুরটাকে নাচায় ; পদে পদে পুচ্ছে বাধে লোহার শলা, কোন কৃপণের রচনা এই নাট্যকলা । কোথায় মুক্ত অরণ্যানী, কোথায় মত্ত বাদল-মেঘের ভেরী । এ কী বঁধন রাখল আমায় ঘেরি । ঘুরে ঘুরে উমেদারির ব্যর্থ আশে শুকিয়ে মরি রোদুরে আর উপবাসে । প্রাণটা ইণপায়, মাথা ঘোরে, তক্তপোশে শুয়ে পড়ি ধপাস করে । হাতপাখাটার বাতাস খেতে খেতে হঠাৎ আমার চোখ পড়ে যায় উপরেতে,— মরচে-পড়া গরাদে ঐ, ভাঙা জানলাখানি, বসে আছে পাশের বাড়ির কালো মেয়ে নন্দরানী । মনে হয় যে রোদের পরে বৃষ্টিভরা থমকে-যাওয়া মেঘে ক্লাস্ত পরান জুড়িয়ে গেল কালো পরশ লেগে । আমি যে ওর হৃদয়খানি চোখের পরে স্পষ্ট দেখি আঁকা ;— ও যেন জুইফুলের বাগান সন্ধ্য-ছায়ায় ঢাকা ; একটুখানি চাদের রেপ কৃষ্ণপক্ষে স্তন্ধ নিশীথ রাতে কালে জলের গহন কিনারাতে । লাজুক ভীরু ঝরনাখানি ঝিরি ঝিরি কালে পাথর বেয়ে বেয়ে লুকিয়ে ঝরে ধারি ধারি । রাত-জাগা এক পাখি, মৃদু করুণ কাকুতি তার তারার মাঝে মিলায় থাকি থাকি । ও যেন কোন ভোরের স্বপন কাল্পাভরা, ঘন ঘুমের নীলাঞ্চলের বাধন দিয়ে ধর ।