পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আসল বয়স ছিল আট, পড়ার ঘরে বসে বসে জুলে ৰেতেম পাঠ । জানলা দিয়ে দেখা যেত মুখুজ্যেদের বাড়ির পাশে একটুখানি পড়ে জমি, শুকনো শীর্ণ ঘাসে দেখায় যেন উপবাসীর মতে । পাড়ার আবর্জনা যত ঐখানেতেই উঠছে জমে , এক ধারেতে ক্রমে পাহাড়-সমান উচু হল প্রতিবেশীর রান্নাঘরের ছাই গোটাকয়েক আকন্দগাছ, আর কোনো গাছ নাই ; দশ-বারোটা শালিথপাখি তুমুল ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে করত ডাকাডাকি ; দুপুরবেলায় ভাঙা গলায় কাকের দলে কী যে প্রশ্ন শকত শূন্যে কিসের কৌতুহলে। পাড়ার মধ্যে ঐ জমিটাই কোনো কাজের নয় ; সবার যাতে নাই প্রয়োজন লক্ষ্মীছাড়ার তাই ছিল সঞ্চয় ; তেলের ভাঙা ক্যালেস্তারা, টুকরো ইঁাড়ির কান, অনেক কালের জীর্ণ বেতের কেদার একখানা, ফুটে এনামেলের গেলাস, থিয়েটারের ছেড়া বিজ্ঞাপন, মরচে-পড়া টিনের লণ্ঠন, সিগারেটের শূন্ত বাক্স, পোলা চিঠির খাম, অদরকারের মুক্তি হেথায়, অনাদরের অমর স্বৰ্গধাম । তখন আমার বয়স ছিল আট, করতে হত ভূবৃত্তাস্ত পাঠ । পড়ার ঘরের দেয়ালে চারপাশে ম্যাপগুলো এই পৃথিবীকে ব্যঙ্গ করত নীরব পরিহাসে ;