পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তির উপায় RS আমাকে দিব্যি গালিয়ে নিয়েছেন, আমার মােসহরা থেকে তোমাকে এক পয়সাও আর দিতে পারব 可1 পুষ্পর প্রবেশ পুষ্প। ফকিরদা ! মনে কী। তোমার শোবার ঘর থেকে পাওয়া গেল মাতৃকোপনিষৎ ! অনিদ্রার পাচন নাকি ! ফকির । (ঈষৎ হেসে) তোমরা কী বুঝবে- মেয়েমানুষ ! পুষ্প। কৃপা করে বুঝিয়ে দিতে দোষ কী ! ফকির হাস্যমুখে নীরব হৈম । কী জানি ভাই, ওখানা উনি বালিশের নীচে রেখে রাত্তিরে ঘুমোন । পুষ্প । বেদমন্ত্রগুলোকে তলিয়ে দেন ঘুমের তলায়। এ বই পড়তে গেলে যে তোমাকে ফিরে যেতে হবে সাতজন্ম পূর্বে। ফকির। শুরু কৃপায় আমাকে পড়তে হয় না । পুষ্প । ঘুমিয়ে পড়তে হয় । ফকির। এই পুঁথি হাতে তুলে নিয়ে তিনি এর পাতায় পাতায় ফু দিয়ে দিয়েছেন, জ্বলে উঠেছে এর পাকে { পুষ্প । সেজন্যে ঘুমের দরকার ? ফকির । খুবই । আমি স্বয়ং দেখেছি গুরুজিকে, দুপুরবেলা আহারের পর ভগবদগীতা পেটের উপর নিয়ে চিত হয়ে পড়ে আছেন বিছানায়- গভীর নিদ্ৰা । বারণ করে দ্বিয়েছেন সাধনায় ব্যাঘাত করতে । তিনি বলেন, ইড়াপিঙ্গলার মধ্য দিয়ে শ্লোকগুলো অন্তরাত্মায় প্রবেশ করতে থাকে, তার আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যায়। অবিশ্বাসীরা বলে, নাক ডাকে । তিনি হাসেন ; বলেন, মূঢ়দের নাক ডাকে, ইড়াপিঙ্গলা ডাকে জ্ঞানীদের।- নাসারন্ধ আর ব্ৰহ্মরাজ ঠিক এক রাস্তায় যেন, চিৎপুর আর চৌরঙ্গী । পুষ্প । ভাই হৈমি, ফকিরদার ইড়াপিজলা আজকাল কীরকম আওয়াজ দিছে। হৈম । খুব জোরে । মনে হয় পেটের মধ্যে তিনটে চারটি ব্যাঙ মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফকির । ঐ দেখো, শুনলে পুষ্পদিদি ? আশ্চর্য ব্যাপার ! সত্যি কথা না জেনেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। গুরুজি বলে দিয়েছেন, মাণ্ডুক্য উপনিষদের ডাকটাই হচ্ছে ব্যাঙের ডাক । অন্তরাত্মা চরম অবস্থায় নাভীগহবরে প্রবেশ করে হয়ে পড়েন কূপমণ্ডুক, চার দিকের কিছুতেই আর নজর পড়ে না। তখনই পেটের মধ্যে কেবলই শিব্যোহং শিব্যোহং শিব্যোহং করে নড়িগুলো ডাক ছাড়তে থাকে। সেই ঘুমেতে কী গভীর আনন্দ সে আমিই জানি- যোগনিদ্রা একেই বলে । भू-अिन कि ' ॐ सैन সেই ব্যাঙডাকা ঘুম ভাঙিয়ে দিতেই তাকে মেরে খুন করেন আর কি ! পুষ্প । ফকিরদা, সংস্কৃতে অনার্স নিয়েছিলুম, আমাকে পড়তে হয়েছিল মাগুক্যের কিছু কিছু। নাকের মধ্যে গোলমরিচের গুড়ো দিয়ে হেঁচে হেঁচ ঘুম ভাঙিয়ে রাখতে হত । ইচির চোটে নিরেট ব্ৰহ্মজ্ঞানের বারো-আনা তরল হয়ে নাক দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল । ইড়াপিজলা রইল বেকার হয়ে । অভাগিনী আমি, গুরুর ফ্ৰয়ের জোরে অজ্ঞানসমুদ্র পার হতে পারলেম না। ফকির । (ঈষৎ হেসে) অধিকারভেদ আছে। পুষ্প । আছে বৈকি। দেখো-না, ঐ শাত্ৰেই ঋষি কোন এক শিষ্যকে দেখিয়ে বলেছেন, সোয়ামাত্মা চতুষ্পাৎ- এর আত্মাটা চার-পা-ওয়ালা। অধিকারভেদকেই তো বলে দু-পাচার-পায়ের ভেদ। হুৈম, মাত্রে তো ব্যাঙের ডাক শুনে জেগে থাকিস, আল্প-কোনো জাতের ডাক শুনিস কি দিনের বেলায় । হৈম । কী জানি ভাই, মিত্ত দৈবাৎ ওঁর মন্ত্রপাড়া জলের ঘটি উলটিয়ে দিতেই উনি যে ইক দিয়ে