পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NW9SR রবীন্দ্র-রচনাবলী “ই, করেছিলেন। কিন্তু লাটিন নামের পাহারার ঘটা দেখে জোড়হাত করে বলেছিলুম, দাদু, এটা থােক, বরঞ্চ তোমার কোয়স্টম থিয়োরির বইখানা নিয়ে আসি।” “সেটা বুকি আপনি বুঝতে পারেন ?” “কিছুমাত্র না। কিন্তু দাদুর একটা বন্ধ সংস্কার আছে- সবাই সব কিছুই বুঝতে পারে। তার সে বিশ্বাস ভাঙতে আমার ভালো লাগে না । তার আর-একটা আশ্চর্য ধারণা আছে- মেয়েদের সহজবুদ্ধি পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি তীক। তাই ভয়ে ভয়ে আহি এইবার নিশ্চয়ই টাইম-স্পেস-এর জোড়-মেলানো সম্বন্ধের ব্যাখ্যা আমাকে শুনতে হবে। আসল কথা, মেয়েদের উপর তার করুণার অন্ত নেই। দিদিমা যখন বেঁচে ছিলেন, বড়ো বড়ো কথা পাড়লেই তিনি মুখ বন্ধ করে দিতেন । তাই মেয়েদের তীক বুদ্ধি যে কতদূর যেতে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিদিমার কাছ থেকে পাননি। আমি ওঁকে হতাশ করতে পারব না। অনেক শুনেছি, বুঝিনি, আরো অনেক শুনৰ আর বুঝবে না।” আচিরার দুই চোখ কৌতুকে স্নেহে জ্বলজ্বল ছলছল করে উঠল। ইচ্ছে করছিল, জিঞ্চ কণ্ঠের এই আলাপ শীঘ্ৰ যেন শেষ হয়ে না যায়। দিনের আলো স্নান হয়ে এল। সন্ধ্যায় প্রথম তারা জ্বলে উঠেছে। শালবনের মাথার উপরে । সঁওতাল মেয়েরা জ্বালানি-কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে ঘরে, দূর থেকে শোনা যাচ্ছে তাদের গান । এমন সময় বাইরে থেকে ডাক এল, “দিদি, কোথায় তুমি। অন্ধকার হয়ে এল যে। আজকাল সময় vert a " “ভালো তো নয়ই দাদু, তাই একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করেছি।” অধ্যাপক আসতেই তঁর পায়ের ধুলো নিয়ে প্ৰণাম করলুম। তিনি শশব্যন্ত হয়ে উঠলেন। পরিচয় দিলুম, “আমার নাম নবীনামাধব সেনগুপ্ত ।” বুদ্ধের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বললেন, “বলেন কী, আপনিই ডাক্তার সেনগুপ্ত ? আপনি তো ছেলেমানুষ ।” আমি বললুম, “নিতান্ত ছেলেমানুষ। আমার বয়স ছত্রিশের বেশি নয়।” আবার অচিরার সেই কলমধুর কণ্ঠের হাসি, আমার মনে যেন দুনো লয়ের ঝংকারে সেতার বাজিয়ে দিলে। বললে, “দাদুর কাছে পৃথিবীর সবাই ছেলেমানুষ, আর দাদু হচ্ছেন্ন সকল ছেলেমানুষের द्धा९3छ ।' অধ্যাপক বললেন, “আগরওয়ালা ? একটা নতুন শব্দ বাংলায় আমদানি করলে । কোথা থেকে জোটালে ।” “সেই যে তোমার ভালোবাসার মাড়োয়ারি ছাত্র, কুন্দনলাল আগরওয়ালা ; আমাকে এনে দিত বোতলে করে আমের চাটনি ; আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলুম, আগরওয়ালা কথাটার মানে কী । সে বলেছিল, পারেনিয়র।” অধ্যাপক বললেন, “ডাক্তার সেনগুপ্ত, আপনার সঙ্গে আলাপ হল যদি, আমাদের ওখানে যেতে হবে তো ।” “কিছু বলতে হবে না, দাদু। যাবার জন্যে লাফালাফি করছেন । আমার কাছে শুনেছেন, দেশকালের একজোট তত্ত্ব নিয়ে তুমি ব্যাখ্যা করবে। আইনস্টাইনের কঁধে চড়ে ।” মনে মনে বললুম, “সর্বনাশ। কী দুঃমি।” অধ্যাপক অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে বললেন, “আপনার বুঝি “টাইম-স্পেস-এর-a” আমি ব্যন্ত হয়ে বলে উঠলুম, “কিছু বুঝি নে “টাইম-স্পেস-এর। আমাকে বোঝাতে গেলে আপনার সময় নষ্ট হবে মাত্ৰা ।” বৃদ্ধ ব্যগ্র হয়ে বলে উঠলেন, “সময় ! এখানে সময়ের অভাব কোথায় । আচ্ছ, এক কাজ করুন-না, আজকে নাহয় আমাদের ওখানে আহার করবেন, ধর্মী বলেন ।” আমি লাফ দিয়ে বলতে যাচ্ছিন্নুম, “এখখনি ।