পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আইমার পক্ষাঘাতের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মৃত্যুর আশঙ্কা আসন্ন। যে পর্যন্ত মৃত্যু না হয় সোহিনীকে তিনি কিছুতে ছাড়বেন না। এই সুযোগটাকে দুহাত দিয়ে আঁকড়িয়ে ধরে নীলার উন্মত্ত যৌবন আলোড়িত হয়ে উঠেছে। পাণ্ডিত্যের চাপে রেবতীর পীেরুষের স্বাদ ফিকে হয়ে গেছে- তাকে নীলার যথেষ্ট পছন্দ নয়। । কিন্তু ওকে বিবাহ করা নিরাপদ, বিবাহােত্তর উচ্চচুম্বলতায় বাধা দেবার জোর তার নেই। শুধু তাই নয়। ল্যাবরেটরির সঙ্গে যে লোভের বিষয় জড়ানো আছে তার পরিমাণ প্রভূত । ওর হিতৈষীরা বলে ল্যাবরেটরির ভার নেবার যোগ্যতর পাত্র কোথাও মিলবে না রেবতীর চেয়ে ; সোহিনী কিছুতে ওকে হাতছাড়া করবে না, এই হচ্ছে বুদ্ধিমানদের অনুমান । এ দিকে সহযোগীদের ধিক্কার শিরোধাৰ্য করে রেবতী জাগানী ক্লাবের অধ্যক্ষতার সংবাদ ঘোষণা করতে দিলে সংবাদপত্রে । নীলা যখন বলত, “ভয় লাগছে বুঝি, ও বলত ‘আমি কেয়ার করি নেী । ওর পৌরুষ সম্বন্ধে সংশয়মাত্র না থাকে। এই জেদ ওকে পেয়ে বসল। বললে, ‘এডিংটনের সঙ্গে চিঠিপত্র আমার চলে, একদিন এই ক্লাবে আমি তাকে নিমন্বিত করে আনব, ক্লাবের মেম্বাবরা বললে “ଓଃ, ” । রোবতীর আসল কাজ গেছে বন্ধ হয়ে। ছিন্ন হয়ে গেছে। ওর সমস্ত চিন্তাসূত্র । মন কেবলই অপেক্ষা করছে নীলা কখন আসবে, হঠাৎ পিছন থেকে ধরবে ওর চোখ টিপে । চৌকির হাতার উপর বসে বা হাতে ধরবে ওর গলা জড়িয়ে । নিজেকে এই বলে আশ্বাস দিচ্ছে, ওর কাজটা যে বাধা পেয়েছে সেটা ক্ষণিক, একটু সুস্থির হলেই ভাঙার মুখে; আবার জোড়া লাগবে । সুস্থির হবার লক্ষণ আশু দেখা যাচ্ছে না। ওর কাজের ক্ষতিতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে নীলার মনের এক কোণেও সে শঙ্কা নেই, সমান্তটাকে সে প্ৰহসন মনে করে । দিনের পর দিন জাল কেৱলই জড়িয়ে যাচ্ছে। জাগানী সভা ওকে ছেকে ধরেছে, ওকে ঘোরতর পুরুষমানুষ বানিয়ে তুলছে। এখনো অকথ্য মুখ থেকে বেরয় না, কিন্তু অশ্রাব্য শুনলে জোর করে হাসতে থাকে। ডক্টর ভট্টাচার্য ওদের খুব একটা মজার জিনিস হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে রেবতীকে ঈর্ষায় কামড়িয়ে ধরে। ব্যাঙ্কের ডাইরেক্টরের মুখের চুরট থেকে নীলা চুরট ধরায় । এর নকল করা রেবতীর অসাধ্য। চুরািটর ধোয়া গলায় গেলে ওর মাথা ঘুরে পড়ে, কিন্তু এই দৃশ্যটা ওর শরীরমনকে আরো অসুস্থ করে তোলে। তা ছাড়া নানারকমের ঠেলাঠেলি টানাটানি যখন চলতে থাকে, ও আপত্তি না জানিয়ে থাকতে পারে না । নীলা বলে, “এই দেহটার 'পরে আমাদের তো কোনো মোহ নেই, আমাদের কাছে এর দাম কিসেরা- আসল দামি জিনিস ভালোবাসা, সেটা কি বিলিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারি।” বলে চেপে ধরে রেবতীর হত । রেবতী তখন অন্যদের অভাজন বলেই মনে করে, ভাবে ওরা ছোবড়া নিয়েই খুশি, শাসটা পেল না। ল্যাবরেটরির দ্বারের বাইরে দিনরাত পাহারা চলছে, ভিতরে ভাঙা কাজ পড়ে রয়েছে, কারও দেখা GF NAVO ড্রয়িংরুমে সোফায় পা দুটাে তুলে কুশনে হেলান দিয়ে নীলা, মেঝের উপরে নীলার পায়ের কাছে ঠেস দিয়ে বসে আছে। রেবতী, হাতে রয়েছে লেখন-ভরা ফুলঙ্ক্যাপ। রেবতী মাথা নেড়ে বললে, “ভাষায় কেমন যেন বেশি রঙ ফলানো হয়েছে, এতটা বাড়িয়ে-বলা লেখা পড়তে লাজ করবে। আমার ।” “ভাষার তুমি মন্ত সমজদার কিনা। এ তো কেমিটি ফরমুলা নয়, খুঁত খুঁত কোরো না, মুখস্থ করে যাও । জান এটা লিখেছেন আমাদের সাহিত্যিক প্রমদারঞ্জনবাৰু ?” “ঐ সব মন্ত মন্ত সেন্টেল আর বড়ো বড়ো শব্দগুলো মুখস্থ করা আমার পক্ষে ভারি শক্ত হবে।”