পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छेिन जी V9) বুকের-পাটাওয়ালা লোকের মুখে মানায় না। প্রথম যখন আপনাকে দেখেছিলুম, তখন দেখেছি আপনি রস খুঁজে বেড়ান নি, পথ খুঁড়ে বেরিয়েছিলেন কড়া মাটি ভেঙে । দেখেছি আপনার নিরাসক্ত পৌরুষের মূৰ্তি- সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে আপনাকে প্ৰণাম করেছি। আজ আপনি কথার পুতুল দিয়ে নিজেকে ভোলাতে বসেছেন। এ দশা ঘটালে কে । স্পষ্ট করেই জিজ্ঞাসা করি, এর কারণ কি আমি।” আমি বললুম, “তা হতে পারে। কিন্তু আপনি তো সাধারণ মেয়ে নন । পুরুষকে আপনি শক্তি দেবেন ।” “হা, শক্তি দেব, যদি নিজেকেই মোহ জড়িয়ে না ধরে। আভাসে বুঝেছি আপনি আমার ইতিহাস কিছু কিছু সংগ্রহ করেছেন। আপনার কাছে কিছু ঢাকবার দরকার নেই। আপনি শুনেছেন আমি ভবতোষকে ভালোবেসেছিলাম।” “ই শুনেছি।” “এও জানেন আমার ভালোবাসার অপমান ঘটেছে।” “হা জানি।” “সেই অপমানিত ভালোবাসা অনেকদিন ধরে আমাকে আঁকড়ে ধরে দুর্বল করেছে। আমি জেদ করে বসেছিলুম তারই একনিষ্ঠ স্মৃতিকে জীবনের পূজামন্দিরে বসাব। চিরদিন একমনে সেই নিম্ফল সাধনা করব মেয়েরা যাকে বলে সতীত্ব। নিজের ভালোবাসার অহংকারে সংসারকে ঠেলে ফেলে নির্জনে চলে এসেছি। কর্তব্যকে অবজ্ঞা করেছি নিজের দুঃখকে সম্মান করব বলে। আমার দাদুকে অনায়াসে সরিয়ে এনেছি তার কাজের ক্ষেত্র থেকে । যেন এই মেয়েটার হৃদয়ের অহমিকা পৃথিবীর সব কিছুর উপরে। মোহ, মোহ, অন্ধ মোহ ।” খািল চুপ করে থেকে হঠাৎ সে বলে উলে, “কাজে আপৰি সেই মােৰ ভাবিয়ে " বিস্মিত হয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে রইলুম। সে বললে, “আপনিই এই আত্মবিমাননা থেকে ছিনিয়ে এনে আমাকে বাচালেন ।” স্তন্ধ রইলুম নিরুত্তর প্রশ্ন নিয়ে। “আপনি তখনো আমাকে দেখেন নি। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখেছি আপনার দুঃসাধ্য প্রয়াসের দিনগুলি- সঙ্গ নেই, আরাম নেই, ক্লান্তি নেই, একটু কোথাও ছিদ্র নেই অধ্যবসায়ে। দেখেছি আপনার প্রশান্ত ললাট, আপনার চাপা ঠোঁটে অপরাজেয় ইচ্ছাশক্তিত্ব লক্ষণ, আর দেখেছি মানুষকে কী রকম অনায়াসে প্রভুত্বের জোরে চালনা করেন। দাদুর কাছে আমি মানুষ, আমি পুরুষের ভক্ত, যে পুরুষ সত্য যে পুরুষ তাপখী । সেই পুরুষকেই দেখবার জন্যে আমার ভক্তিপিপাসু নারী ভিতরে ভিতরে অপেক্ষা করে ছিল নিজের অগোচরে । মাঝখানে এসেছিল অপদেবতা প্রবৃত্তির টানে। অবশেষে নিষ্কাম পুরুষের সূদৃঢ় শক্তিরােপ আপনিই আনলেন আমার চোখের সামনে ।” আমি জিগগোসা করলুম, “তার পর কি ভাবের পরিবর্তন হয়েছে।” 疆 “হী হয়েছে। আপনার বেদী থেকে নেমে এসেছেন প্রতিদিন । স্থানীয় কাগজে পড়লুম, দূরে অন্য-এক জায়গায় সন্ধানের কাজে আপনার ডাক পড়েছে। আপনি নড়লেন না, ভিতরে ভিতরে আত্মপ্লানি ভোগ করলেন। আপনার পথের সামনেকার ঢেলাখানার মতো আমাকে লাথি মেরে টুড়ে ফেলে দিলেন না কেন। কেন নিষ্ঠুর হতে পারলেন না। যদি পারতেন। তবে আমি ধন্য হাতুম। আমার ব্ৰতের পারশা হত। আমার কান্না দিয়ে ।” মৃদুঘরে বললুম, “যাবার জন্যেই কাগজপত্তর গুছিয়ে নিচ্ছিলুম।” "না, না, কখনোই না। মিথ্যে ঢুতো করে নিজেকে ভোলাচ্ছিলেন। যতই দেখলুম। আপনার দুর্বলতা, ভয় হতে লাগল আমার নিজেকে নিয়ে। ছি, ছি, কী পরাভাবের বিষ৷ এনেছি নারীর জীবনে, কেবল অন্যের জন্যে নয়, নিজের জন্যেও । ক্রমশই একটা চাঞ্চল্য আমাকে পেয়ে বসলে, এসে যেন এই বনের বিবনিশ্বাস থেকে। একদিন এখানকার পিশাচী রাত্রি এমন আমাকে আবিষ্ট করে ধরেছিল যে