পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OS) রবীন্দ্র-রচনাবলী মনে হল যে এত বড়ো প্রবৃত্তি রাক্ষসীও আছে যে আমার দাদুর কাছ থেকেও আমাকে ছিনিয়ে নিতে পারে। তখনই সেই রাত্রেই ছুটি নদীর জলে ঝাপ দিয়ে পড়ে ডুব দিয়ে দিয়ে স্নান করে এসেছি।” এই কথা বলতে বলতে অচিরা ডাক দিল, “দাদু।” অধ্যাপক গাছতলায় বসে পড়ছিলেন। উঠে এসে মেহের স্বরে বললেন, “কী দিদি ? দূর থেকে ཨ་ཙ་བའི་གར ཨ་ཁ། ཅོག་རྩ་ཡ་ས་ གའི་ ཅ་། མི་མཆམ་ཅག་གག ཨ་མན་ཆཁན། ཚ་ " মোৰ কথা থাক তুমি গােল তুমি সেদিন বলেছিলে মানুষের চরম অভিব্যক্তি তপস্যার মধ্য " “হ্যা, আমি তাই তো বলি। বর্বর মানুষ জন্তুর পর্যায়ে। কেবলমাত্র তপস্যার মধ্য দিয়ে সে হয়েছে জ্ঞানী মানুষ। আরো তপস্যা আছে সামনে, স্কুল আবরণ যুগে যুগে ত্যাগ করতে করতে সে হবে দেবতা । পুরাণে দেবতার কল্পনা আছে, কিন্তু দেবতা ছিলেন না। অতীতে, দেবতা আছেন ভবিষ্যতে । মানুষের ইতিহাসের শেষ অধ্যায়ে ।” অচিরা বললে, “দাদু, এইবার এসো, তোমার-আমার কথাটা আপসে চুকিয়ে দিই, কদিন থেকে মনের মধ্যে তোলপাড় করছে।” আমি উঠে পড়লুম, বললুম, “তা হলে যাই।” “না, আপনি বসুন।--দাদু, সেই যে কলেজের অধ্যক্ষপদটা তোমার ছিল, সেটা খালি হয়েছে। তোমাকে ডাক দিয়েছে ওরা ।” অধ্যাপক আশ্চর্য হয়ে বললেন, “কী করে জানলে ভাই ।” “তোমার কাছে চিঠি এসেছে, সে আমি চুরি করেছি।” “চুরি করেছ!” । “করব না! আমাকে সব চিঠিই দেখাও কেবল কলেজের ছাপ-মারা ঐ চিঠিটাই দেখালে না। তোমার দূরভিসন্ধি সন্দেহ করে চুরি করে দেখতে হল ।” অধ্যাপক অপরাধীর মতো ব্যস্ত হয়ে বললেন, “আমারই অন্যায় হয়েছে।” “কিছু অন্যায় হয় নি। আমাকে লুকোতে চেয়েছিলে যে আমার জীবনের অভিসম্পাত এখনো তুমি নিজের উপর টেনে নিয়ে চলবে । তোমার আপনি আসন থেকে আমি যে নামিয়ে এনেছি তোমাকে । আমাদের তো ঐ কাজ ।” “কী বলছি দিদি ৷” । “সত্যি কথাই বলছি। তুমি শিক্ষাদানযজ্ঞের হােতা, এখানে এনে আমি তোমাকে করেছি। শুধু গ্রন্থকীট। বিশ্বসৃষ্টি বাদ দিলে কী দশা হয় বিশ্বকর্তার। ছাত্র না থাকলে তোমার হয় ঠিক তেমনি । সত্যি কথা বলে ।” “বরাবর ইস্কুলমাস্টারি করে এসেছি। কিনা।” “তুমি আবার ইস্কুলমাস্টাের !! কী যে বল তুমি ! তুমি যে স্বভাবতই আচার্য। দেখেন নি, নবীনবাবু, ওঁর মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে কি আর দয়ামায়া থাকে না । আমনি আমাকে নিয়ে পড়েনবারো-আনাই বুঝতেই পারি নে। নইলে হাতড়িয়ে বের করেন এই নবীনবাবুকে, সে হয় আরো শোচনীর । দাদু, ছাত্র তোমার নিতান্তই চাই জানি, কিন্তু বাছাই করে নিয়ো, রূপকথার রাজা সকালে ঘুম থেকে উঠেই যার মুখ দেখত তাকেই কন্যা দান করত। তোমার বিদ্যাদান অনেকটা সেইরকম।” “না দিদি, আমাকে বাছাই করে নেয় যারা তারাই সাহায্য পায় আমার । এখনকার দিনে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র সংগ্রহ করে, আগেকার দিনে সন্ধান করে শিক্ষক লাভ করত শিক্ষাথী ৷” “আচ্ছা, সে কথা পরে হবে । এখনকার সিদ্ধান্তু এই যে, তোমাকে তোমার সেই কাজটা ফিরিয়ে নিতে হবে ।” অধ্যাপক হতবুদ্ধির মতো নাতনির মুখের দিকে চেয়ে রইলেন । অচিরা বললে, “তুমি ভাবছি,