পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা \OSo ( সেই আকাশ-পৃথিবীর বিবাহমন্ত্রগুজন নিয়ে নববর্ষা নামুক আমাদের বিচ্ছেদের পরে। প্রিয়ার মধ্যে যা অনির্বচনীয় তাই হঠাৎ-বেজে-ওঠা বীণার তারের মতো চকিত হয়ে উঠুক। সে আপনসিঁথির 'পরে তুলে দিক দূর বানান্তের রঙটির মতো তার নীলাঞ্চল। তার কালো চোখের চাহনিতে মেঘমাল্লারের সব মিড়গুলি আর্ত হয়ে উঠুক। সার্থক হােক বকুলমালা তার বেণীর বঁাকে বঁাকে জড়িয়ে ềở | যখন ঝিল্লীর ঝংকারে বেণুবনের অন্ধকার থারথার করছে, যখন বাদল-হাওয়ায় দীপশিখা কেঁপে কেঁপে নিবে গেল, তখন সেতার অতি কাছের ঐ সংসারটাকে ছেড়ে দিয়ে আসুক, ভিজে ঘাসের গন্ধে ভরা বনপথ দিয়ে, আমার নিভৃত হৃদয়ের নিশীথ-রাত্রে। কীর্তিক ১৩২৬ दैन्ि বঁশির বাণী চিরদিনের বাণী- শিবের জটা থেকে গঙ্গার ধারা, প্রতি দিনের মাটির বুক বেয়ে চলেছে; অমরাবতীর শিশু নেমে এল মর্তের ধূলি নিয়ে স্বৰ্গস্বৰ্গ খেলতে । পথের ধারে দাড়িয়ে বঁশি শুনি আর মন যে কেমন করে বুঝতে পারি নে। সেই ব্যথাকে চেনা সুখদুঃখের সঙ্গে মেলাতে যাই, মেলে না। দেখি, চেনা হাসির চেয়ে সে উজ্জ্বল, চেনা চোখের জলের চেয়ে সে গভীর । আর, মনে হতে থাকে, চেনাটা সত্য নয়, অচেনাই সত্য। মন এমন সৃষ্টিছাড়া ভাব ভাবে কী করে। কথায় তার কোনো জবাব নেই । আজ ভোরবেলাতেই উঠে শুনি, বিয়েবাড়িতে বাঁশি বাজছে। বিয়ের এই প্রথম দিনের সুরের সঙ্গে প্রতি দিনের সুরের মিল কোথায় । গোপন অতৃপ্তি, গভীর নৈরাশ্য ; অবহেলা, অপমান, অবসাদ ; তুচ্ছ কামনার কার্পণ্য, কুগ্ৰী নীরসন্তার কলহ, ক্ষম্যহীন ক্ষুদ্রতার সংঘাত, অভ্যন্ত জীবনযাত্রার ধুলিলিপ্ত দারিদ্র্য- বঁশির দৈববাণীতে এ সব বার্তর আভাস GQ গানের সুর সংসারের উপর থেকে এই সমস্ত চেনা কথার পর্দা এক টানে ছিড়ে ফেলে দিলে। চিরদিনকার বর-কনের শুভদৃষ্টি হচ্ছে কোনরক্তাংশুকের সলজ অবগুণ্ঠনতলে, তাই তার তানে তানে প্রকাশ হয়ে পড়ল । যখন সেখানকার মালাবদলের গান বাঁশিতে বেজে উঠল তখন এখানকার এই কনেটির দিকে চেয়ে দেখলেম ; তার গলায় সোনার হার, তার পায়ে দুগাছি মল, সে যেন কান্নার সরোবরে আনন্দের পদ্মটির উপরে দাড়িয়ে । সুরের ভিতর দিয়ে তাকে সংসারের মানুষ বলে আর চেনা গেল না। সেই চেনা ঘরের মেয়ে অচিন ঘরের বউ হয়ে দেখা দিলে। বঁশি বলে, এই কথাই সত্য। " ठिंबा ४७३७