পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 রবীন্দ্র-রচনাবলী R কলকাতার বাসায় দোতলার ঘরে মীনু শুয়ে থাকে। হিন্দুস্থানি দাই কাছে বসে কত কী বকে ; গে খানিক শোনে, খানিক শোনে না । একদিন সারারাত মীনুর ঘুম ছিল না। ভোরের আঁধার একটু যেই ফিকে হল সে দেখতে পেলে, তার জানলার নিচেকার গোলকটিাপার গাছটি ফুলে ভরে উঠেছে। তার একটু মৃদুগন্ধ মীনুর জানলার কাছটিতে এসে যেন জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কেমন আছ ।” ওদের বাসা আর পাশের বাড়িটার অল্প একটুখানি ফাকের মধ্যে ঐ রৌদ্রের কঙাল গাছটি বিশ্বপ্রকৃতির এই হাবা ছেলে, কেমন করে এসে পড়ে যেন বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্লান্ত মীনু বেলায় উঠত। উঠেই সেই গাছটির দিকে চেয়ে দেখত, সেদিনের মতো আর তো তেমন ফুল দেখা যায় না। দাইকে বলত, “আহা দাই, মাথা খা, এই গাছের তলাটি খুঁড়ে দিয়ে রোজ একটু জল দিস।” এই গাছে কেন-যে কদিন ফুল দেখা যায় নি, একটু পরেই বোঝা গেল । সকালের আলো তখন আধফোটা পদ্মের মতো সবে জাগছে, এমন সময় সাজি হাতে পূজারি ব্ৰাহ্মণ গাছটাকে বঁাকানি দিতে লাগল, যেন খাজনা আদায়ের জন্যে বােগর পেয়াদা । মীনু দাইকে বললে, “শীঘ্ৰ ঐ ঠাকুরকে একবার ডেকে আন।।" ব্ৰাহ্মণ আসতেই মীনু তাকে প্ৰণাম করে বললে, “ঠাকুর, ফুল নিচ্ছ কার জন্যে ।” ব্ৰাহ্মণ বললে, “দেবতার জন্যে ।” মীনু বললে, “দেবতা তো ঐ ফুল স্বয়ং আমাকে পাঠিয়েছেন।” '(७ाभा6क !" “ই, আমাকে । তিনি যা দিয়েছেন সে তো ফিরিয়ে নেবেন বলে দেন নি।” ব্ৰাহ্মণ বিরক্ত হয়ে চলে গেল । পরের দিন ভোরে আবার সে যখন গাছ নাড়া দিতে শুরু করলে তখন মীনু তার দাইকে বললে, ”ও দাই, এ তো আমি চোখে দেখতে পারি নে। পাশের ঘরের জানলার কাছে আমার বিছানা করে দে।" V পাশের ঘরের জানলার সামনে রায়চৌধুরীদের চীেতলা বাড়ি। মীনু তার স্বামীকে ডাকিয়ে এনে বললে, “ঐ দেখো, দেখো, ওদের কী সুন্দর ছেলেটি। ওকে একটিবার আমার কোলে এনে দাও-না৷ ” স্বামী বললে,“গরিবের ঘরে ছেলে পাঠাবে কেন।” মীনু বললে, “শোনো একবার ! ছোটাে ছেলের বেলায় কি ধনী-গরিবের ভেদ আছে। সবার কোলেই ওদের রাজসিংহাসন।” বামী ফিরে এসে খবর দিলে, “দরোয়ান বললে, “বাবুর সঙ্গে দেখা হবে না।” পরের দিন বিকেলে মীনু দাইকে ডেকে বললে, “ঐ চেয়ে দেখ, বাগানে একলা বসে খেলছে। দৌড়ে যা, ওর হতে এই সন্দেশটি দিয়ে আয় ।” সন্ধাবেলায় স্বামী এসে বললে, “ওরা রাগ করেছে।” "কেন, কী হয়েছে।” "ওরা বলেছে, দাই যদি ওদের বাগানে যায় তো পুলিসে ধরিয়ে দেবে।” এক মুহূর্তে মীনুর দুই চোখ জলে ভেসে গেল। সে বললে, “আমি দেখেছি, দেখেছি, ওর হােত থেকে ওরা আমার সন্দেশ ছিনিয়ে নিলে। নিয়ে ওকে মারলে। এখানে আমি বঁচিব না। আমাকে নিয়ে ॥३ ”

  • Qırğış yer