পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(28 রবীন্দ্র-রচনাবলী VO) বুড়োর সকলের চেয়ে ভয় তার মেয়েকে । সেই গিরির শাসন বড়ো কড়া, তার সংসারে সবাই থাকে সাবধানে । বুড়ো আজ একমনে পুতুল গড়তে বসেছে ; উর্দশ হল না, পিছন থেকে তার মেয়ে ঘন ঘন হাত দুলিয়ে আসছে। কাছে এসে যখন সে ডাক দিলে তখন চশমাটা চোখ থেকে খুলে নিয়ে অবোধ ছেলের মতো তাকিয়ে রইল । মেয়ে বললে, “দুধ দেওয়া পড়ে থাক, আর তুমি সুভদ্রাকে নিয়ে বেলা বইয়ে দাও। অত বড়ো মেয়ে, ওর কি পুতুলখেলার বয়স।” বুড়ো তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “সুভদ্রা খেলবে কেন । এ পুতুল রাজবাড়িতে বেচব । আমার দাদির যেদিন বর আসবে সেদিন তো ওর গলায় মোহরের মালা পরাতে হবে । আমি তাই টাকা জমাতে bit. " মেয়ে বিরক্ত হয়ে বললে, “রাজবাড়িতে এ পুতুল কিনবে কে ৷” বুড়োর মাথা হেঁট হয়ে গেল। চুপ করে বসে রইল। সুভদ্ৰা মাথা নেড়ে বললে, “দাদার পুতুল রাজবাড়িতে কেমন না কেনে দেখব ।” 8 দুদিন পরে সুভদ্রা এক কাহন সোনা এনে মাকে বললে, “এই নাও, আমার দাদার পুতুলের দাম ।” মা বললে, “কোথায় পেলি ।” মেয়ে বললে, “রাজপুরীতে গিয়ে বেচে এসেছি।” বুড়ো হাসতে হাসতে বললে, “দাদি, তবু তো তোর দাদা এখন চোখে ভালো দেখে না, তার হাত (o R " মা খুশি হয়ে বললে, “এমন যোলোটা মোহর হলেই তো সুভদ্রার গলার হার হবে ।” বুড়ো বললে, “তার আর ভাবনা কী ।” সুভদ্রা বুড়োর গলা জড়িয়ে ধরে বললে, “দাদাভাই, আমার বরের জন্যে তো ভাবনা নেই।” বুড়ো হাসতে লাগল, আর চোখ থেকে এক ফোটা জল মুছে ফেললে । বুড়োর যৌবন যেন ফিরে এল। সে গাছের তলায় বসে পুতুল গড়ে আর সুভদ্ৰা কাক তাড়ায়, আর यूएन शैलीब्रांग दलाल बैगा-6 कान अल bान। একে একে ষোলোটা মোহর গাথা হল, হার পূর্ণ হয়ে উঠল। মা বললে, “এখন বর এলেই হয় ।” সুভদ্ৰা বুড়োর কানে কানে বললে, “দাদাভাই, বর ঠিক আছে।” দাদা বললে, “বল তো দাদি, কোথায় পেলি বর।” সুভদ্রা বললে, “যেদিন রাজপুরীতে গেলেম দ্বারী বললে, কী চাও। আমি বললেম, রাজকন্যাদের কাছে পুতুল বেচিতে চাই । সে বললে, এ পুতুল এখনকার দিনে চলবে না। বলে আমাকে ফিরিয়ে দিলে। একজন মানুষ আমার কান্না দেখে বললে, দাও তো, ঐ পুতুলের একটু সাজ ফিরিয়ে দিই, বিক্রি হয়ে যাবে। সেই মানুষটিকে তুমি যদি পছন্দ কর দাদা, তা হলে আমি তার গলায় মালা দিই।” বুড়ো জিজ্ঞাসা করলে, “সে আছে কোথায় ।” নাতনি বললে, “ঐ যে বাইরে পিয়ালগাছের তলায় ।”