পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՀԵr রবীন্দ্র-রচনাবলী সর্বনাশ ! গাঁজাখোরের আত্মাপুরুষকে খবর দিই। কী করে। চেচিয়ে বলে উঠলুম, আরো আৱে, শোনো শোনো, ঢুকে পড়ে। এই গীটার মধ্যে, নিয়ে যাও এটাকে । কেউ কোথাও নেই। ভাবছি, আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন দেব। পূপেদিদি এতখানি চোখ করে বললে, সত্যি কি, দাদামশায়। আমি বললুম, সত্যির চেয়ে অনেক বেশি- গল্প । আমি তখন এম এ ক্লাসের জন্যে এরিয়োপ্যাজিটিকার নোিট লিখছি, মিলিয়ে দেখবার জনো বই পড়তে হচ্ছিল ইন্টারন্যাশনাল মেলি ফুয়স অ্যাব্রা-ক্যাড্যাব্রা, আর পাত কেটে পরিশিষ্ট দেখছিলুম খ্ৰী হন্দ্রেড ইয়র্স অব ইন্ডো-ইন্ডিটমিনেশন বইখানার। লাইব্রেরি থেকে আনাতে দিয়েছি অনেম্যাটােপিইয়া অব টিন্টিন্যাবুলেশন। এমন সময় হুড়মুড়া করে এসে ঢুকাল আমাদের সে । আমি বললুম, হয়েছে কী, স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়েছে। নাকি । ও বললে, নিশ্চয় দিত। যদি সে থাকত। কিন্তু, কী কাণ্ড বাধিয়েছ বলে দেখি । एक, दी झूल । আমাকে নিয়ে এ পর্যন্ত বিস্তর আজগবি গল্প বানিয়েছ। ভাগ্যে আমার নামটা দাও নি, নইলে ভদ্রসমাজে মুখ দেখানো দায় হত। দেখলুম। পুপূদিদির মজা লাগছে, তাই সহ্য করেছি। সব । কিন্তু এবার যে উল্টো হল । कन, की श्ल बनाई-नां । তবে শোনো । পুপূদিদি কাল গিয়েছিল সিনেমায়। মোটরে উঠতে যাচ্ছে, আমি পিছন থেকে এসে বললুম, দিদিমণি, তোমার গাড়িতে আমাকে তুলে নিয়ে যাও । তার পরে কী আর বলব দাদা, একেবারে হিস্টিরিয়া । কিরকম । হাতে চােখ ঢেকে চেচিয়ে উঠে দিদি বললে, যাও যাও, গাজাখোরের গা চুরি করে আমার গাড়িতে উঠতে পাবে না। চার দিক থেকে লোক এল ছুটে, আমাকে পুলিসে ধরে নিয়ে যায় আর-কি। জীবনে অনেক নিন্দে শুনেছি, কিন্তু এরকম ওরিজিনাল নিন্দে শুনি নি কখনো । গাজাখোরের গা চুরি করা ! আমার অতিবড়ো প্ৰাণের বন্ধুও এমন নিন্দে আমার নামে রটায় নি। বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত ব্যাপারটা শোনা গেল । এ তোমারই কীর্তি । আমারই তো বটে। কী করি বলে । তোমাকে নিয়ে আর কঁহাতক গল্প বানাই। বয়স হয়ে গেছে, কলামটাকে যেন বাতে ধরল, পুপূদিদির ফরমাশ মতো অসম্ভব গল্প বলার হালকা চাল আর নেই, কলমের । তাই এই শেষ গল্পটাতে তোমাকে একেবারে খতম করে দিয়েছি। খতম হতে রাজি নই, দাদা। দোহাই তোমার, পুপূদিদির ভয় ভাঙিয়ে দাও। বুঝিয়ে বলো, ওটা বলেছিলুম, কিন্তু ভয় ভাঙতে চায় না। নাড়ীতে জড়িয়ে গেছে। উপায় না দেখে স্বয়ং সেই পাতু গেঁজেলকে আনলুম তার সামনে, উল্টো হল ফল। পাতুর গ’খানা পরে যে তুমিই ঘুরে বেড়ােচ্ছ তারই প্রমাণ প্ৰত্যক্ষ হয়ে গেল । তা হলে দাদা, গল্পটাকে উলটিয়ে দাও, ধনুটঙ্কারে মরুক পাতু। গাজাখোরের গ’খানাকে নিমতলার ঘাটে পুড়িয়ে ফেলো। ঘটা করে তার শ্ৰাদ্ধ করব, পুপূদিদিকে করব তাতে নেমস্তন্ন ; খরচ যত পড়ে দেব নিজের পকেট থেকে । আমি হলুম দিদির গল্পের বহুরূপী, হঠাৎ এত বড়ো পদ থেকে আমাকে অপদস্থ করলে বাঁচব না ।