পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q 8 ○> সাহেব জিগেস করলেন, আরো আছে না কি । পাতু বললে, না থাকলে মান রক্ষা হয় না যে। কুলীনের ছেলে। নৈকষাকুলীন । রবিবার দিনে পুপূদিদি পড়েছে গল্পটা। আমাকে জিগেস করলে, আচ্ছা দাদামশায়, তুমি যে লিখেছি একরাশ ইংরেজি বই নিয়ে কোন কলেজের জন্যে বই লিখছি। তোমার আবার কলেজ কোথায়, তা ছাড়া কখনো তো দেখি নি। ঐ রকমের বই খুলতে। তুমি তো লেখ কেবল ছড়া। স্পষ্ট জবাব না দিয়ে একটুখানি হাসলুম। আচ্ছা দাদামশায়, তুমি কি সংস্কৃত জান। দেখো পুপূদিদি, এরকম প্রশ্নগুলো বড়ো রূঢ় । মুখের সামনে জিগেস করতে নেই। সকালবেলায় পূপেদিদি উদবিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলে, দাদামশায় সোঁকে নিয়ে সব গল্প কি ফুরিয়ে tन | দাদামশায় খবরের কাগজ ফেলে রেখে চশমা কপালে তুলে বললে, গল্প ফুরোয় না, গল্প-বলিয়ের দিন ফুরোয় । আচ্ছা; ও তো গা ফিরিয়ে পেলে, তার পরে কী হল বলো-না । আবার ওকে গা খাটিয়ে মরতে হবে, গায়ে পড়ে নিতে হবে নানা দায়। কখনো গায়ে যুঁ দিয়ে বেড়াবে । কখনো গালমন্দ গা পেতে নেবে, কখনো নেবে না । কখনো কাজে গা লাগবে, কখনো লাগবে না। ওর গা থাকা সত্ত্বেও কুঁড়েমি দেখে লোকে বলবে, কিছুতে ওর গা নেই। কখনো গা ঘুরবে, কখনো গা কেমন করবে, গা ঘুলিয়ে যাবে। কখনো গা ভার হবে, কখনো গা মাটি-মাটি করবে, গা ম্যাজমাজ করবে, গা সিরসির করবে, গা ঘিনীঘিন করতে থাকবে। সংসারটা কখনো হবে গা-সিওয়া, কখনো হবে উল্টো । কারও কথায় গা জ্বলে যাবে, কারও কথায় গা যাবে জুড়িয়ে । বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে গায়ে জ্বর আসবে। এত মুশকিল একখানা গা নিয়ে। আচ্ছা, দাদামশায়, ও যখন আর-একজনের গা নিয়ে বেড়ােত তখন মুশকিল হত। কার । গা কেমন করলে ওর করত কি তার করত । শক্ত কথা। আমি তো বলতে পারব না, ওকে জিগেস করলে ওরাও মাথা ঘুরে যাবে। দাদামশায়, গা নিয়ে এত হাঙ্গাম আমি কখনো ভাবি নি । ঐ হাঙ্গামগুলো জোড়া দিয়েই তো যত গল্প। গায়ের উপর সওয়ার হয়ে গল্প ছুটেছে চার দিকে । কোনো গা গল্পের গাধা, কোনো গা গল্পের রাজহতীী । তোমার গা কী, দাদামশায় । বলব না | অহংকার করতে বারণ করে শাস্ত্ৰে । দাদামশায়, সৌর গল্প তুমি থামিয়ে দিলে কেন। বলি তা হলে । কুঁড়েমির স্বৰ্গ সকল স্বর্গের উপরে। সেখানে যে ইন্দ্র বসে অমৃত খাচ্ছেন হাজার চক্ষু আধখানা বুজে, তিনি হলেন গল্পের দেবতা। আমি তার ভক্ত ; কিন্তু ঠার সভায় আজকাল ঢুকতেই পারি। নে । আমার ভাগে গল্পের প্রসাদ অনেকদিন থেকে বন্ধ । (8= । পথ ভুল হয়ে গিয়েছিল। दी काल । অমরাবতীর যে সুরধুনীনদীর এক পারে ইন্দ্রলোক, তারই ভাটিতে আছে আর-এক স্বৰ্গ । কারখানাঘরের কালো ধোয়ার পতাকা উড়ছে সেখানকার আকাশে । সেটা হল কাজের স্বৰ্গ । সেখানে