পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিষম খুশি হয়ে চলে গেল দমদমে । | aन | অনেক দিন পরে নিজের কান দুটাে ফিরে পেয়ে স্বকৰ্ণে আওয়াজ শোনবার শখ ওর কিছুতে মিটতে চায় না। শ্যামবাজারের মোড়ে কান পেতে থাকে ট্রামের বাসের ঘড়ঘড়ানিতে। টিটেগড়ের চটকলের দারোয়নের সঙ্গে ভাব করে নিয়েছে, তার ঘরে বসে কলের গর্জন শুনে ওর চোখ বুজে আসে। ঠোঙায় করে রসগোল্লা আর আলুর দম নিয়ে বারুন কোম্পানির কামারের দোকানে বসে খেতে যায়। বন্দুকের তাক অভ্যোস করতে গোড়া ফৌজ গেছে। দমদমে, ও তারই ধুম ধুম শব্দ শুনছিল আরামে, টার্গেটর ও পারে বসে। আনন্দে আর থাকতে পারলে না, টার্গেটের এ ধারে মুখ বাড়িয়ে দেখতে LBBS DDD TB gD DDB DB S DDBS বাস কী, দাদামশায়। বাস মানে সব গল্প গেল একদম ফুরিয়ে। না, না, সে হতেই পারে না। আমাকে ফাকি দিচ্ছি। এমন করে তো সব গল্পই ফুরোতে পারে। ফুরোয় তো বটেই। না, সে হবে না কিছুতেই। তার পরে কী হল বলে । বল কী- মরার পরেও ? ই, মরার পরে । তুমি গল্পের সাবিত্রী হয়ে উঠলে দেখছি! না, অমন করে আমাকে ভোলাতে পারবে না, বলো কী হল। " আচ্ছা, বেশ । লোকে বলে মরার বাড়া গাল নেই। মরার বাড়াও গাল আছে, সেই কথাটা বলি তবে 1 ফৌজের ডাক্তার ছিল তাঁবুতে, মন্ত ডাক্তার সে । সে যখন খবর পেলে মানুষটা মগজে গুলি লেগে মরেছে, বিষম খুশি হয়ে লাফ দিয়ে চেচিয়ে উঠল-- হুররা। খুশি হল কেন । ও বললে, এইবার মগজ বদল করার পরীক্ষা হবে। মগজ বদল হবে কী করে । বিজ্ঞানের বাহাদুরি। জু থেকে চেয়ে নিলে একটা বনমানুষ। বের করলে তার মগজ । আর, সের মাথার খুলি খুলে ফেললে। তার মধ্যে বঁাদরের মগজ পুরে দিয়ে খড়ির পলেস্তারা দিয়ে মাথাটা বেঁধে রাখলে পনেরো দিন। খুলি জুড়ে গেল। বিছানা ছেড়ে সে যখন উঠল, তখন সে এক বিষম কাণ্ড । যাকে দেখে তার দিকে দাঁত খিচিয়ে কিচিমিচ করে ওঠে। নর্স দিলে দৌড়। ডাক্তারাসাহেব বজমুঠিতে ওর দুই হাত চেপে ধরে জোর গলায় বললেন, স্থির হয়ে বোসো এইখানে। ও হুঙ্কারটা বুঝলে, কিন্তু ভাষাটা বুঝলে না। ও চেকিতে বসতে চায় না, ও লাফ দিয়ে উঠে বসতে চায় টেবিলের উপরে। কিন্তু, লাফ দিতে পারে না, ধাপ করে পড়ে যায় মেজের উপর। দরজাটা খোলা ছিল, বাইরে ছিল একটা অশথগাছ। সবার হাত এড়িয়ে ছুটিল সেই গাছের দিকে । ভাবলে, এক লাফে চড়তে পারবে ডালে । বারবার লাফ দিতে থাকে। অথচ ডালে পেঁৗছতে পারে না, ধপকরে পড়ে যায়। বুঝতেই পারে না, কেন পারছে না । রেগে রেগে ওঠে। ওর লাফ দেখে চার দিকে মেডিকেল কলেজের ছেলেরা হো-হো করে হাসতে থাকে । ও দাত খিচিয়ে তেড়ে তেড়ে যায় । একজন ফিরিঙ্গি ছেলে গাছতলায় পাছড়িয়ে বসে কোলে রুমাল পেতে রুটি মাখন দিয়ে কলা দিয়ে আরামে খাচ্ছিল, ও হঠাৎ গিয়ে তার কলা ছিনিয়ে নিয়ে দিলে মুখে পুরে ; ছেলেটা রেগে ওকে মারতে যায়, বন্ধুদের হাসি কিছুতে থামতে by a মহা ভাবনা পড়ে গেল ওর জিন্মে নেবে কে । কেউ বললে পাঠাও জুতে, কেউ বললে । অনাথ-আশ্রমে। জুরি কর্তা বললে, এখানে মানুষ পোষা আমাদের বরাদে নেই। অনাথ-আশ্রমের অধ্যক্ষ বললে, এখানে বান্দর পোষা আমাদের নিয়মে কুলোবে না।