পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দাদামশায়, থামলে কেন । দিদিমণি, জগতের সাব-কিছুর সাব-শেষে আছে থামা । না, এ কিন্তু এখনো থামে নি। কলা ছিনিয়ে খাওয়া ও তো যে-সে পারে। আচ্ছা, কাল হবে, আজ কাজ আছে। काल की शल योना-ना, अझ dक्शनेि । জান তো ওর বিয়ের সম্বন্ধ আগেই হয়েছে? ওর যে মগজ বদল হয়ে গেছে সে খবরটা কনের বাড়িতে পৌঁছয় নি। দিন স্থির, লগ্ন স্থির। বরের পিসে ওকে মন্ত দু। ছড়া কলা খাইয়ে ঠাণ্ড করে বিয়ের জায়গায় নিয়ে গেছেন । তার পরে বিয়েবাড়িতে যে কাণ্ডটা হল তা ভালো করে ফলিয়ে বললে তখন তুমিই বলবে, গল্পের মতো গল্প হয়েছে। এর পরে আর ওকে মেরে ফেলবার দরকার হবে না। সে মরার বাড়া হবে । সন্ধেবেলায় বসেছি। ছাদে। দিব্যি দক্ষিণের হাওয়া দিচ্ছে। শুক্লা চতুর্থীর চাদ উঠেছে আকাশে । পুপূদিদি একটি আকদের মালা গেঁথে এনেছে কাচপাত্রে, “গল্প বলা শেষ হলে বকশিশ মিলবে। হেনকালে ইপাতে ইপাতে সে উপস্থিত । বললে, আজ থেকে আমার গল্প জোগানের কাজে আমি ইস্তফা দিলুম। আমাকে পাতু গেজেলের গা পরিয়েছিলে, সেও সহ্য করেছি। শেষকালে বাদরের মগজ পুরেছ। আমার খুলির মধ্যে, এ সইবে না। এর পরে হয়তো আমাকে চামচিকে কি টিকটিকি কি গুবরে পোকা বানিয়ে দেবে। তোমাদের অসাধ্য কিছুই নেই। আজ আপিসে গিয়ে কেদারা টেনে বসেছি। দেখি ডেস্কের উপরে এক ছড়া মৰ্তমান কলা । সহজ অবস্থায় কলা আমি ভালোই বাসি, কিন্তু এখন থেকে আমাকে কলা খাওয়া ছেড়েই দিতে হবে । পুপুদিদি, এর পরে তোমার ঐ দাদামশায় আমাকে নিয়ে যদি ব্ৰহ্মদত্যি কিংবা কন্ধকাটা বানান, তা হলে কাগজে না ছাপান যেন । ইতিমধ্যে কন্যাকর্তা এসেছিলেন আমার ঘরে । বিয়েতে আশি ভরি সোনা দেবার কথা পাকা ছিল ; একদম নেমে গেছে তেরো ভারতে । ওরা বুঝেছে, আমার ভাগ্যে এর পরে কনে জোটা দায় হবে। এই তবে বিদায় নিলেম । SO সন্ধেবেলায় বসে আছি। দক্ষিণ দিকের চাতালে। সামনে কতকগুলো পুরোনাে কালের প্রবীণ শিরীষগাছ আকাশের তারা আড়াল করে জোনাকির আলো দিয়ে যেন একশোটা চোখ টিপে ইশারা করছে । পূপেদিকে বললেম, বুদ্ধি তোমার অত্যন্ত পেকে উঠছে, তাই মনে করছি আজ তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেব, একদিন তুমি ছেলেমানুষ ছিলে । দিদি হেসে উঠে বললে, ঐখানে তোমার জিত । তুমিও এক কালে ছেলেমানুষ ছিলে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেবার উপায় আমার হাতে নেই । আমি নিশ্বাস ফেলে বললুম, বোধ হয়। আজকের দিনে কারও হতেই নেই। আমিও শিশু ছিলুম, তার একমাত্র সাক্ষী আছে। ঐ আকাশের তারা । আমার কথা ছেড়ে দাও, আমি তোমার একদিনকার ছেলেমানুবির কথা, বলব। তোমার ভালো লাগবে কি না জানি নে, আমার মিষ্টি লাগবে। আচ্ছা, বলে যাও । বোধ হচ্ছে, ফাল্গুন মাস পড়েছে। তার আগেই কদিন ধরে রামায়ণের গল্প শুনেছিলে সেই চিকচিকে টাক-ওয়ালা কিশোয়ী চট্রোর কাছে । আমি সকালবেলায় চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছি, তুমি এতখানি চোখ করে এসে উপস্থিত । আমি বললেম, হয়েছে কী । ইপাতে ইপাতে বললে, আমাকে হরণ করে নিয়েছে ।