পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t 8brዒ তেজে নগর গ্রাম সমস্ত পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি যাকে বিয়ে করব, আমি চাই তার পায়ের কাছে? বড়ো বড়ো রাজবাদীরা হাত জোড় করে থাকবে, আর রাজার মেয়েরা বন্দিনী হয়ে কেউ-বা চামর দোলাবে, কেউ বা ছত্র ধরে থাকবে, আর কেউ বা আনবে তার পানের বাটা। সন্ন্যাসী বললেন, আর-কিছু চাই নে তোমার ? রাজকন্যা বললেন, আর-কিছুই না । সন্ন্যাসী বললেন, সেই দেশ-জ্বালানো অন্ত্রের সন্ধানে চললেম । সন্ন্যাসী গেলেন চলে। বললেন, ধিক । চলতে চলতে এসে পড়লেন এক বনে। খুলে ফেললেন জটাজুট । ঝরনার জলে স্নান করে গায়ের ছাই ফেললেন ধুয়ে। তখন বেলা প্রায় তিনপ্রহর। প্রখর রোদ, শরীর শ্ৰান্ত, ক্ষুধা প্রবল। আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে নদীর ধারে দেখলেন একটি পাতার ছাউনি। সেখানে একটি ছোটাে চুলা বানিয়ে একটি মেয়ে শাকপাত চড়িয়ে দিয়েছে। রাধবার জন্য । সে ছাগল চরায় বনে, সে মধু জড়ো করে রাজবাড়িতে জোগান দিত। বেলা কেটে গেছে। এই কাজে । এখন শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে শুরু করেছে রান্না । তার পরনের কাপড়খানি দাগপড়া, তার দুই হাতে দুটি শাখা, কানে লাগিয়ে রেখেছে একটি ধানের শিষ । ‘চোখ দুটি তার ভোমরার মতো কালো। স্নান করে সে ভিজে চুল পিঠে মেলে দিয়েছে যেন বাদলশেষের রাত্তির । রাজা বললেন, বড়ো খিদে পেয়েছে। মেয়েটি বললে, একটু সবুর করুন, “আমি অন্ন চড়িয়েছি, এখনই তৈরি হবে আপনার জন্য। রাজা বললেন, আর, তুমি কী খাবে তা হলে । সে বললে, আমি বনের মেয়ে, জানি কোথায় ফলমূল কুড়িয়ে পাওয়া যায়। সেই আমার হবে ঢের । অতিথিকে অন্ন দিয়ে যে পুণ্য হয়। গরিবের ভাগ্যে তা তো সহজে জোটে না । রাজা বললেন, তোমার আর কে আছে । মেয়েটি বললে, আছেন আমার বুড়ো বাপ, বনের বাইরে তঁর কুঁড়েঘর। আমি ছাড়া তার আর কেউ নেই। কাজ শেষ করে কিছু খাবার নিয়ে যাই তার কাছে । আমার জন্য তিনি পথ চেয়ে আছেন। রাজা বললেন, তুমি অন্ন নিয়ে চলো, আর আমাকে দেখিয়ে দাও সেই সব ফলমূল যা তুমি নিজে । 07 S e কন্যা বললে, আমার যে অপরাধ হবে । মুসলিম তুমি দেবতার আশীর্ব পাৰে। তােমার কােনে ভয় নেই। আমাকে পথ দেখিয়ে b୦୧୩ | বাপের জন্য তৈরি অল্পের থালি সে মাথায় নিয়ে চলল। ফলমূল সংগ্রহ করে দুজনে তাই খেয়ে নিলে। রাজা গিয়ে দেখলেন, বুড়ো বাপ কুঁড়েঘরের দরোজায় বসে। সে বললে, মা, আজ দেরি হল কেন । কন্যা বললে, বাবা, অতিথি এনেছি তোমার ঘরে । বৃদ্ধ ব্যস্ত হয়ে বললে, আমার গরিবের ঘর, কী দিয়ে আমি অতিথিসেবা করব । রাজা বললেন, আমি তো আর কিছুই চাই নে, পেয়েছি তোমার কন্যার হাতের সেবা। আজ আমি বিদায় নিলেম । আর-একদিন আসব। সাত দিন সাত রাত্রি চলে গেল, এবার রাজা এলেন রাজবেশে । তার অশ্ব রথ সমন্ত রইল বনের বাইরে। বৃদ্ধের পায়ের কাছে মাথা রেখে প্ৰণাম করলেন ; বললেন, আমি বিজয়পত্তনের রাজা। রানী খুঁজতে বেরিয়েছিলাম দেশে বিদেশে। এতদিন পরে পেয়েছি- যদি তুমি আমায় দান কর, আর ঘদি *नों थोकन ब्रांछि । বৃদ্ধের চোখ জলে ভরে গেল। এল রাজহতী- কাঠকুড়ানি মেয়েকে পাশে নিয়ে রাজা ফিরে গেলেন রাজধানীতে ।