পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

do ভালোমানুষ ছিঃ, আমি নেহাত ভালোমানুষ । কুসমি বললে, কী যে তুমি বল তার ঠিক নেই। তুমি যে ভালোমানুষ সেও কি বলতে হবে। কে না জানে, তুমি ও পাড়ার লেটিনগুণ্ডার দলের সর্দার নও। ভালোমানুষ তুমি বল কাকে । এইবার ঠিক প্রশ্নটা এসেছে তোমার মুখে । ভালোমানুষ তাকেই বলে যে অন্যায়ের কাছেও নিজের দখল ছেড়ে দেয়, দরাজ হাতের গুণে নয়, মনের জোর নেই বলেই । GRAN ? যেমন আজই ঘটেছিল। সকালে । বেশ একটুখানি গুছিয়ে নিয়ে লিখতে বসেছিলুম, এমনসময় এসে হাজির পাঁচকড়ি। একেবারে সাহারা থেকে সিমুম হাওয়া বয়ে গেল, শুকিয়ে গেল মনের মধ্যে যা-কিছু ছিল তাজা । ঐ একটি প্রাণী বিধাতার কারখানা থেকে বাকা হয়ে বেরিয়েছিল, কোনো মানুষের সঙ্গে কোনোখানেই জোড় মেলে না। এক সময়ে ক্যালকাটাকে উচ্চারণ করেছিল কালকুট্টা, সেই অবধি সবাই ওকে ডাকত কালোকুত্তা । শুনতে শুনতে সেটা ওর কানে সয়ে গিয়েছিল। ইস্কুলে কেউ ওকে দেখতে পারত না । একদিন আমাদের রমেন "রাস্কেল' বলে ঘাড়ের উপর পড়ে ঘুষিয়ে ওর নাক বাকিয়ে দিয়েছিল ; বলে রেখেছিল, এর পরের বারে কান দেবে বঁকা করে । এসেই সে বসল। আমার লেখাপড়া করার চৌকিটাতে। ভালোমানুষের মুখ দিয়েবেরোল না, ওখানে আমি কাজ করব । ডেস্কের উপর বুকে যেন অন্যমনে এটা ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লািগল । বললে দোষ হত না যে, ওগুলো দরকারি জিনিস, ঘাটাঘাটি কোরো না । কিন্তু- কী আর বলব । বললে, অনেককাল দেখা সাক্ষাৎ হয় নি। শুরু করলে, আহা আমাদের সেই ইস্কুলের দিন ছিল কী সুখের । গল্প লাগালে খোড়া গোবিন্দ ময়রার । দেখি, আন্তে আস্তে সরে যাচ্ছে আমার সেনা-বাধানো ফাউন্টেন-পেনাটা, চাদরের আড়ালে ওর পকেটের দিকে । বললেই হত, ভুল করছ, কলামটা তোমার নয়, ওটা আমার । কিন্তু, আমি যে ভালোমানুষ, ভদ্রলোকের ছেলে- এতবড়ো লজ্জার কথা ওকে বলি কী করে। ওর চুরিকরা হাতটার দিকে চাইতেই পারলুম না। সন্দেহ করছি লোকটা বলে বসবে, আজ এখানেই খাব । বলতে পারব না, না, সে হবে না । ভাবতে ভাবতে ঘেমে উঠেছি । হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এল ; বলে বসলুম, রমেনের ওখানে আমাকে এখনই যেতে হবে । কালকুত্তা বললে, ভালো হল, তোমার সঙ্গে একত্রেই যাওয়া যাক। ইস্কুল ছেড়ে অবধি তার সঙ্গে dकांशe gनशों श्य नेि । কী মুশকিল। ধাপ করে বসে পড়লুম। বাইরের দিকে তাকিয়ে বললুম, বৃষ্টি পড়ছে দেখছি। ও বললে, তাতে হয়েছে কী । আমার ছাতা নেই, কিন্তু তোমার সঙ্গে এক ছাতাতেই যেতে পারব । আর কেউ হলে জোর করেই বলত, সে হবে না। কিন্তু, আমার উপায় নেই। তা, ভালোমানুষ হলেও বিপদে পড়লে আমার মাথাতেও বুদ্ধি জোগায়। আমি বললুম, অত অসুবিধা করবার দরকার কী। তার চেয়ে বরঞ্চ ছাতাটা তুমি নিয়ে যাও, যখনই সুযোগ হবে ফিরিয়ে দিলেই হবে। আর সে তিলমাত্ৰ দেরি করল না । বললে, প্ল্যানটা শোনাচ্ছে ভালো । ছাতটা বগলে করে চাটুপটু সরে পড়ল। ভয় ছিল, ফাউন্টেন-পেনের খোজ উঠে পড়ে। ছাতা ফেরাবার সুযোগ কোনোদিনই হবে না। হায় রে, আমার পনেরো টাকা দামের সিস্কের ছাতাটা । ছাতা ফিরবে না, ফাউন্টেন-পেনিও ফিরবে না, কিন্তু সবচেয়ে আরামের কথা হচ্ছে- সেও ফিরবে না। কী বল, দাদামশায় ! তোমার সেই ফাউন্টেন-পেন, সেই ছাতা, তুমি ফিরে পাবে না ? ভদ্র বিধান-মতে ফিরে পাবার আশা নেই। আর, অভদ্র বিধান-মতে ?