পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5. ( S S পাচু বই নিয়ে গেল না বলে ; বলে, খোটা দিয়ে নাকো তা বলে । বলে, হিসাবের ভুল দৈবে । ধার নিয়ে যার কোনো সাড়া নেই বলে তারে, বিশেষ তো তাড়া নেই। যত কোন যায় তারে ঘা মারি বলে, দোষ ছিল বুঝি আমারি । মুক্তকুন্তলা আমার খুদে বন্ধুরা এসে হাজির তাদের নালিশ নিয়ে। বললে, দাদামশায় তুমি কি আমাদের ছেলেমানুষ মনে কর । ভাই, ঐ ভুলটাই তাে করেছিল। আজকাল নিজেরই বয়েস্টর ভুল হিসেব করতে শুরু <tdछ | রূপকথা আমাদের চলবে না, আমাদের বয়েস হয়ে গেছে । আমি বললুম, ভায়া, রূপকথার কথাটা তো কিছুই নয় । ওর রূপটাই হল আসল । সেটা সব বয়সেই চলে। আচ্ছা, ভালো, যদি পছন্দ নাহয় তবে দেখি খুঁজে-পেতে। নিজের বয়েসটাতে ডুব মেরে তোমাদের বয়েসটাকে মনে আনতে চেষ্টা করছি। তার থলি থেকে রূপকথা নাহয় বাদ দিলুম, তার পরের সারে দেখতে পাই মৎস্যনারীর উপাখ্যান। সেও চলবে না । তোমরা নতুন যুগের ছেলে, খাটি খবর চাও ; ফস করে জিজ্ঞেস করে বসবে লোজা যদি হয় মাছের, মুড়ো কী করে হবে মানুষের ; রোসো, তবে ভেবে দেখি । তোমাদের বয়েসে, এমন-কি, তোমাদের চেয়ে কিছু বেশি বয়েসে আমরা মাজিকওয়ালা হরীশ হালদারকে পেয়ে বসেছিলুম। শুধু তঁর ম্যাজিকে হাত ছিল না, সাহিত্যেও কলম চলত। আমাদের কাছে সেও ছিল মাজিক-বিশেষ । আজও মনে আছে একটা কুলকুলে খাতায় লেখা তার নাটকটা, নাম ছিল মুক্ত কুন্তলা । এমন নাম কার মাথায় আসতে পারে ! কোথায় লাগে সূর্যমুখী, কুন্দনন্দিনী । তার পর তার মধ্যে যা সব লম্বা চালের কথাবার্তা, তার বুলিগুলো শুনে মনে হয়েছিল, এ কালিদাসের ছাপ-মারা মাল। বীরাঙ্গনার দাপট কী ! আর দেশ-উদ্ধারের তাল ঠোকা । নাটকের রাজপুত্রটি ছিলেন স্বয়ং পুরুরাজের ভাগ্নে ; নাম ছিল রণদুর্ধর্ষ সিং । এও একটা নাম বটে, খুউবুন্তলার নামের সঙ্গে সমান পায়তারা করতে পারে । আমাদের তাক লেগে গেল । আলেকজান্ডার এসেছিলেন ভারত জয় করতে । রণদুর্ধর্ষ বিদায় নিতে এলেন মুক্ত কুন্তলার কাছে । মুক্ত কুন্তলা বললেন, যাও বীরবর, যুদ্ধে জয়লাভ করে এসো, আলেকজান্ডারের মুকুট এনে দেওয়া চাই క్షాశా যুদ্ধে মারা পড়লেও পাবে তুমি স্বৰ্গলোক, আর যদি বেঁচে ফিরে এস তো স্বয়ং উঃ, কতবড়ো চটপট হাততালির জায়গা একবার ভেবে দেখো। আমি রাজি হলেম মুক্ত কুন্তলা সাজতে, কেননা, আমার গলার আওয়াজটা ছিল মিহি । আমাদের দালানের পিছন দিকে খানিকটা পোড়ো জমি ছিল, তাকে বলা হত গোলাবাড়ি । সত্যিকার ছেলেমানুষের পক্ষে সেই জায়গাটা ছিল ছুটির স্বর্গ। সেই গোলাবাড়ির একটা ধারে আমাদের বাড়ির ভাড়ার ঘর, লোহার গরাদে দেওয়া ; সেই গরাদের মধ্যে হাত গলিয়ে বস্তার ফাকের থেকে ডাল চাল কুড়িয়ে আনতুম ! ইটের উনুন পেতে কাঠকোট জোগাড় করে চড়িয়ে দিতুম