পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RVSN রবীন্দ্র-রচনাবলী করছে, কিংবা বিনাশ করছে- কী করছে জানা নেই, আঘাত করছে এইটেই নিঃসংশয়। এই যে ক্রমাগতই কসমিকরশ্মি-বর্ষণ চলেছে। এর উৎপত্তির রহস্য অজানা রয়ে গেল। কিন্তু জানা গেছে বিপুল এর উদ্যম, সমস্ত আকাশ জুড়ে এর সঞ্চারণ, জলে হলে আকাশে সকল পদার্থেই এর প্ৰবেশ। এই মহা আগন্তুকের পিছনে বিজ্ঞানের চর লেগেই আছে, কোনদিন এর গোপন ঠিকানা ধরা পড়বে। অনেকে বলেন কসমিক আলো আলোই বটে, র্যান্টগেন রশ্মির চেয়ে বহুগুণে জোরালো। তাই এরা সহজে পুরু সীসে বা মোটা সোনার পাত পার হয়ে চলে যায়। বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় এটুকু জানা গেছে। এই আলোর সঙ্গে আছে বৈদ্যুতিকণা। পৃথিবীর যে ক্ষেত্রে চৌম্বকশক্তি বেশি এরা তারই টানে আপনি পথ থেকে সরে গিয়ে মেরুপ্রদেশে জমা হয়, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় কসমিক রশ্মির সমাবেশের কমিবেশি দেখা যায়। কসমিক রশ্মির সম্বন্ধে এখনো নানা মতের আনাগোনা চলেইছে। পরমাণুর নূতন তত্ত্বের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানীমহলে মননের ও মতের তোলাপাড়ার অন্ত নেই, বিশ্বের মূল কারখানার ব্যবস্থায় ধ্রুবত্বের পাকা সংকেত খুঁজে বের করা অসাধ্য হল। নিত্য বলে যদি কিছু খ্যাতি পেতে পারে তবে সে কেবল এক আদিজ্যোতি, যা রয়েছে সব কিছুরই ভূমিকায়, যার প্রকাশের নানা অবস্থান্তরের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বের এই বৈচিত্র্য । •काळ এই তো দেখা গেল বিশ্বব্যাপী অরূপ বৈদ্যুতলোক। এদের সম্মিলনের দ্বারা প্ৰকাশবান রূপলোেক ajkorpGa | গোড়াতেই বলে রাখি বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের আসল চেহারা কী জানিবার জো নেই। বিশ্বাপদার্থের নিতান্ত অল্পই আমাদের চোখে পড়ে। তা ছাড়া আমাদের চোখ কান স্পর্শেন্দ্ৰিয়ের নিজের বিশেষত্ব আছে । তাই বিশ্বের পদার্থগুলি বিশেষ ভাবে বিশেষ রূপে আমাদের কাছে দেখা দেয় । ঢেউ লাগে চোখে, দেখি আলো। আরো সূক্ষ্ম বা আরো স্কুল ঢেউ সম্বন্ধে আমরা কানা। দেখাটা নিতান্ত অল্প, না-দেখাটাই অত্যন্ত বেশি। পৃথিবীর কাজ চালাব বলেই সেই অনুযায়ী আমাদের চোখ কান, আমরা যে বিজ্ঞানী হব প্রকৃতি সে খেয়ালই করে নি। মানুষের চোখ অণুবীক্ষণ ও দুরবীন এই দুইয়ের কাজই সামান্য পরিমাণে করে থাকে। বোধের সীমা বাড়লে বা বোধের প্রকৃতি অন্যরকম হলে আমাদের জগৎটাও হত অন্যরকম । বিজ্ঞানীর কাছে সেই অন্যরকমই তো হয়েছে। এতই অন্যরকমের যে, যে-ভাষায় আমরা কাজ চালাই এ জগতের পরিচয় তার অনেকখানিই কাজে লাগে না। প্রত্যহ এমন চিহ্নওয়ালা ভাষা তৈরি করতে হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষ তার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারে না। একদিন মানুষ ঠিক করেছিল বিশ্বমণ্ডলের কেন্দ্ৰে পৃথিবীর আসন অবিচলিত, তাকে প্রদক্ষিণ করছে সূৰ্য্যূনপেক্ষত্র। মনে যে করেছিল, সেজন্যে তাকে দোষ দেওয়া যায় না- সে দেখেছিল। পৃথিবী-দেখা সহজ চোখে। আজ তার চোখ বেড়ে গেছে, বিশ্ব-দেখা চোখ বানিয়ে নিয়েছে। ধরে নিতে হয়েছে পৃথিবীকেই দুটিতে হয় সূর্যের চারদিকে, দরবেশী নাচের মতো পাক খেতে খেতে । পথ সুদীর্ঘ লাগে ৩৬৫ দিনের কিছু বেশি। এর চেয়ে বড়ো পথওয়ালা গ্ৰহ আছে, তারা ঘুরতে এত বেশি। সময় নেয় যে ততদিন বেঁচে থাকতে গেলে মানুষের পরমায়ুর বহর বাড়াতে হবে। রাত্রের আকাশে মাঝে মাঝে-নক্ষত্রপুজের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় লেপে দেওয়া আলো ।তাদের নাম দেওয়া হয়েছে নীহারিকা। এদের মধ্যে কতকগুলি সুদূরবিকৃত অতি হালকা গ্যাসের মেঘ, আবার কতকগুলি নক্ষত্রের সমাবেশ। দূরবীনে এবং ক্যামেরার যোগে জানা গেছে যে, যে ভিড় নিয়ে এই