পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(፩ (፩ S রবীন্দ্র-রচনাবলী এককালে জ্যোতিষীরা আন্দাজ করেছিলেন যে, বৃহস্পতিগ্রহ পৃথিবীর মতো এত ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি। তার নিজের যথেষ্ট তাপের সঞ্চয় আছে। তার বায়ুমণ্ডলে সর্বদা যে চঞ্চলতা দেখা যায় তার নিজে অন্তরের তাপই তার কারণ। কিন্তু যখন বৃহস্পতির তাপমাত্রার হিসাব কষা সম্ভব হল তখন দেখা গোল গ্রহটি অত্যন্তই ঠাণ্ডা। বরফজমা শৈত্যের চেয়ে আরো ২৮০ ফারেনহাইট ডিগ্রির তলায় পৌঁছায় তার তাপমাত্রা। এত অত্যন্ত বেশি ঠাণ্ডায় বৃহস্পতির জোলো বাষ্প থাকতেই পারে না। তার বায়ুমণ্ডল থেকে দুটাে গ্যাসের কিনারা পাওয়া গেল। একটা হচ্ছে অ্যামেনিয়া, নিশাদলে যার তীব্ৰগন্ধে চমক লাগায়, আর একটা আলেয়া গ্যাস, মাঠের মধ্যে পথিকদের পথ ভোলাবার জন্যে যার নাম আছে । নানাপ্রকার যুক্তি মিলিয়ে আপাতত স্থির হয়েছে যে, বৃহস্পতির দেহ কঠিন, প্রায় পৃথিবীর সমান ঘন । বৃহস্পতির ভিতরকার পাথুরে জঠরটার প্রসার বাইশ হাজার মাইল ; এর উপর বরফের স্তর জন্ম রয়েছে। ষোলো হাজার মাইল। এই বরফপুঞ্জের উপরে আছে ৬০০০ মাইল বায়ুস্তর। এতবড়ে রাশকরা বাতাসের প্রবল চাপে হাইড্রোজেনও তরল হয়ে যায় । অতএব এই গ্রহে ঘটেছে কঠিন বরফস্তরের উপরে তরল গ্যাসের সমুদ্র । আর তার বায়ুমণ্ডলের উৰ্ব্বস্তর তরল অ্যামেনিয়া বিন্দুতে তৈরি । বৃহস্পতি অতিকায় গ্রহ, ওর ব্যাস প্রায় নব্বই হাজার মাইল, আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে তেরোশে” ९१६ दr७ | সূর্যপ্ৰদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির লাগে প্রায় বারো বৎসর। দূরে থাকাতে ওর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে অনেক বড়ো হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু ও চলেও যথেষ্ট মন্দ গমনে । পৃথিবী যেখানে উনিশ মাইল চলে এক সেকেণ্ডে, ও চলে আট মাইল মাত্র । কিন্তু ওর স্বাবর্তন অর্থাৎ নিজের মেরুদণ্ডের চার দিকে ঘোরা খুবই দ্রুত বেগে । অতবড়ো বিপুল দেহটাকে পাক খাওয়াতে ওর লাগে দশ ঘণ্টা । আমাদের একদিন এক রাত্রি সময়ের মধ্যে ওরা দুই দিনরাত্রি শেষ হয়েও উদূৰ্ববৃত্ত থাকে। নয়টি উপগ্রহ নিয়ে বৃহস্পতির পরিবারামণ্ডলী। দশম উপগ্রহের খবর পাওয়া গেছে, কিন্তু সে-খবর পাকা হয় নি। পৃথিবীর চাদের চেয়ে এই চাদগুলোর বৃহস্পতি-প্ৰদক্ষিণা-বেগ অনেক বেশি দ্রুত প্রথম চারটি উপগ্রহ আমাদেরই চাদের মতো বড়ো । তাদেরও আছে অমাবস্যা পূর্ণিমা এবং ক্ষয়বৃদ্ধি বৃহস্পতির সব-দূরের দুটি উপগ্রহ তাঁর দলের অন্যান্য উপগ্রহের উলটাে মুখে চলে। এর থেকে কেউ কেউ আন্দাজ করেন, এরা এককালে ছিল দুটাে গ্ৰহিকা, বৃহস্পতির টানে ধরা পড়ে গেছে আলো যে এক সেকেণ্ডে ১৮৬০০০ মাইল বেগে ছুটে চলে তা প্রথম স্থির বৃহস্পতির চন্দ্রগ্রহণ থেকে । হিসাব মতে বৃহস্পতির উপগ্রহের গ্রহণ যখন ঘটবার কথা, প্রত্যেকে বারে তার কিছুকাল পরে ঘটতে দেখা যায়। তার কারণ, ওর আলো আমাদের চোখে পড়তে কিছু দেরি করে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে আলো চলে, এ যদি না হত তা হলে গ্রহণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রহণের ঘটনািট দেখা যেত। পৃথিবী থেকে এই উপগ্রহের দূরত্ব মেপে ও গ্রহণের মেয়াদ কতটা পেরিয়েছে সেটা লক্ষা করে আলোর বেগ প্ৰথম হিসাব করা হয় । বৃহস্পতির নিজস্ব আলো নেই তার প্রমাণ পাওয়া যায় বৃহস্পতির নয়-নয়টি উপগ্রহের গ্রহণের সময়। গ্রহণটা হয় কী করে ভেবে দেখো। কোনো এক যোগাযোগে যখন সূর্য থাকে পিছনে, আর গ্ৰহ থাকে আলো আড়াল করে সূর্যের সামনে, আর তারও সামনে থাকে গ্রহের ছায়ায় উপগ্রহ, তখনই সূর্যালোক পেতে বাধা পেয়ে উপগ্রহে লাগে গ্রহণ। কিন্তু মধ্যবর্তী গ্রহের নিজেরই যদি আলো থাকত, তা হলে সেই আলো পড়ত উপগ্রহে, গ্রহণ হতেই পারত না । আমাদের টাদের গ্রহণেও সেই একই কথা। চাঁদের কাছ থেকে সূর্যকে যখন সে আড়াল করে, তখন জ্যোতিহীন পৃথিবী চাদকে ছায়াই দিতে পারে, নিজের থেকে আলো দিতে পারে না । বৃহস্পতিগ্রহের পরের পঙক্তিতে আসে। শনিগ্ৰহ। এ গ্রহ আছে সূৰ্য থেকে ৮৮ কোটি ৬০ লক্ষ মাইল দূরে। আর ২৯ */২ বছরে এক পাক তার সূৰ্যপ্ৰদক্ষিণ। শনির বেগ বৃহস্পতির চেয়েও কম- এক সেকেণ্ডে ছমাইল মাত্র। বৃহস্পতি ছাড়া