পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

d ዓ S রবীন্দ্র-রচনাবলী জন্তুধর্মের উলটাে পথে গিয়ে । জাতিক সত্তার অন্তর্গত প্রত্যেকের মধ্যে নিয়ত এই ক্রিয়া চলছে বলে একটা বৃহৎ সীমানার মধ্যে একটা বিশেষ ছাদের মনুষ্যসংঘ তৈরি হয়ে উঠছে। একটা বিশেষ জাতিক আচরণ নিশ্চিন্ত মনে প্রত্যাশা করতে পারে। মানুষ জন্মায় জন্তু হয়ে, কিন্তু এই সংঘবদ্ধ ব্যবস্থার মধ্যে অনেক দুঃখ করে সে মানুষ হয়ে ওঠে । এই যে বহুকালক্ৰমাগত ব্যবস্থা যাকে আমরা সমাজ নাম দিয়ে থাকি, যা মনুষ্যত্বের প্রেরয়িত তাকেও সৃষ্টি করে চলেছে মানুষ প্রতিনিয়ত- প্ৰাণ দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে, চিন্তা দিয়ে, নব নব অভিজ্ঞতা দিয়ে, কালে কালে তার সংস্কার করে। এই অবিশ্রাম দেওয়া-নেওয়ার দ্বারাই সে প্রণবান হয়ে ওঠে। নইলে সে জড়যন্ত্র হয়ে থাকত এবং তার দ্বারা পালিত এবং চালিত মানুষ হত কলের পুতুলের মতো ; সেই সব যান্ত্রিক নিয়মে বাধা মানুষের মধ্যে নতুন উদ্ভাবনা থাকত না, তাদের মধ্যে অগ্রসরগতি হত অবরুদ্ধ । সমাজ এবং সমাজের লোকদের মধ্যে এই প্ৰাণগত মনোগত মিলনের ও আদানপ্রদানের উপায়স্বরূপে মানুষের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যে সৃষ্টি সে হচ্ছে তার ভাষা। এই ভাষার নিরন্তর ক্রিয়ায় সমস্ত জগতকে এক করে তুলেছে ; নইলে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানবধর্ম থেকে বঞ্চিত হত । জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেন, এমন-সব নক্ষত্ৰ আছে যারা দীপ্তিহারা, তাদের প্রকাশ নেই, জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর মধ্যে তারা অখ্যাত । জীবজগতে মানুষ জ্যোতিষ্কজাতীয় । মানুষ দীপ্ত নক্ষত্রের মতো কেবলই আপন প্রকাশশক্তি বিকীর্ণ করছে। এই শক্তি তার ভাষার মধ্যে । জ্যোতিষ্ক নক্ষত্রের মধ্যে পরিচয়ের বৈচিত্রা আছে ; কারও দীপ্তি বেশি, কারও দীপ্তি স্নান, কারও দীপ্তি বাধাগ্ৰস্ত । মানবলোকেও তাই । কোথাও ভাষার উজ্বলতা আছে, কোথাও নেই। এই প্রকাশবান নানা জাতির মানুষ ইতিহাসের আকাশে আলোক বিস্তীর্ণ করে আছে। আবার কাদেরও বা আলো নিবে গিয়েছে, আজ তাদের ভাষা লুপ্ত । জাতিক সত্তার সঙ্গে সঙ্গে এই-যে ভাষা অভিব্যক্ত হয়ে উঠেছে। এ এতই আমাদের অন্তরঙ্গ যে, এ আমাদের বিস্মিত করে না, যেমন বিস্মিত করে না। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি- যে চোখের দ্বার দিয়ে নিত্যনিয়ত আমাদের পরিচয় চলছে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে। কিন্তু একদিন ভাষার সৃষ্টিশক্তিকে মানুষ দৈবশক্তি বলে অনুভব করেছে। সে কথা আমরা বুঝতে পারি যখন দেখি য়িহুদি পুরাণে বলেছে, সৃষ্টির আদিতে ছিল বাক্য ; যখন শুনি ঋগবেদে বাগদেবতা আপন মহিমা ঘোষণা করে বলছেনআমি রাজী। আমার উপাসকদের আমি ধনসমূহ দিয়ে থাকি। পূজনীয়দের মধ্যে আমি প্রথম । দেবতারা আমাকে বহু স্থানে প্ৰবেশ করতে দিয়েছেন । প্রত্যেক মানুষ, যার দৃষ্টি আছে, প্ৰাণ আছে, শ্রুতি আছে, আমার কাছ থেকেই সে অন্ন গ্ৰহণ করে : যারা আমাকে জানে না তারা ক্ষীণ হয়ে যায় । আমি স্বয়ং যা বলে থাকি তা দেবতা এবং মানুষদের দ্বারা সেবিত । আমি যাকে কামনা করি তাকে दलयान कवि, भूहैिकर्ड कब्रि, शर्षि कवि, अछायान कब्रि। ܔ কোঠাবাড়ির প্রধান মসলা ইট, তার পরে চুন-সুরকির নানা বাধন। ধ্বনি দিয়ে আঁটবাধা শব্দই ভাষার ইট, বাংলায় তাকে বলি কথা । নানারকম শব্দচিহ্নের গ্ৰন্থি দিয়ে এই কথাগুলোকে গেঁথে de क्षी खांब । মাটির তাল নিয়ে চাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কুমের গড়ে তোলে হাঁড়িকুড়ি, নানা খেলনা, নানা মূর্তি। মানুষ সেইরকম গলার আওয়াজটাকে ঠোঁটে দাঁতে জিভে টাকরায় নাকের গর্তে ঘুরিয়ে ধ্বনির পুত্ৰ