পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ነbrN9 রবীন্দ্র-রচনাবলী পরিণতি। নতুন নতুন জ্ঞানের সঙ্গে, ভাবের সঙ্গে, রীতির সঙ্গে, আমাদের পরিচয় যত বেড়ে চলেছে। আমাদের ভাষার প্রকাশ ততই হচ্ছে ব্যাপক । গত ষাট বছরে যা ঘটেছে দু-তিন শতকেও তা ঘটেনি। ংলা ভাষার কঁচা অবস্থায় যেটা সবচেয়ে আমাদের চোখে পড়ে সে হচ্ছে ক্রিয়া ব্যবহার সম্বন্ধে ভাষার সংকোচ। সদ্য-ডিমা-ভাঙা পাখির বাচ্ছার দেখা যায় ডানার ক্ষীণতা। ক্রিয়াপদের মধ্যেই থাকে ভাষার চলবার শক্তি। রূপগোস্বামীর লেখা কারিকা থেকে পুরোনো বাংলা গদ্যের একটু নমুনা দেখলেই এ কথা বুঝতে পারা যাবে gኖጫ ፵ዋቑ qነፃ fiፋ፬ | ማሻgፃ ናIቑ®ፃ ፴ግeፃ ፵ጓeፃ ማሻሻeዛ qቑ ሓil5gዛ | ቂ ማ@gri শ্ৰীমতি রাধিকাতেও বসে - পূর্বরাগের মূল দুই হটাৎ শ্রবণ অকস্মাৎ শ্রবণ।” ক্রিয়াপদ-ব্যবহার যদি পাকা হত, তা হলে উড়ে চলার বদলে ভাষার এরকম লাফ দিয়ে দিয়ে চলা সম্ভব হত না । সেই সময়কেই বাংলা ভাষার পরিণতির যুগ বলব যখন থেকে তার ক্রিয়াপদের যথোচিত প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্য ঘটেছে। পুরাতন গদ্যের বিস্তৃত নমুনা যদি পাওয়া যেত তা হলে ক্রিয়াপদ-অভিব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে ভাষার অভিব্যক্তির ধারা নির্ণয় করা সহজ হত । রামমোহন রায় যখন গদ্য লিখতে বসেছিলেন তখন তঁাকে নিয়ম হেঁকে হেঁকে কোদাল হাতে, রাস্ত বানাতে হয়েছিল। ঈশ্বর গুপ্তের আমলে বঙ্কিমের কলমে যে গদ্য দেখা দিয়েছিল তাতে যতটা ছিল পিণ্ডত, আকৃতি ততটা ছিল না। যেন ময়দা নিয়ে তাল পাকানো হচ্ছিল, লুচি বেলা হয় নি । সজনীকান্ত দাসের প্রবন্ধ থেকে তার একটা নমুনা দিইগগনমণ্ডলে বিরাজিত কাদম্বিনী উপরে কম্পায়মান শম্পা সঙ্কাশ ক্ষণিক জীবনের অতিশয় প্রিয় হওত মূঢ় মানবমণ্ডলী অহঃরহঃ বিষয় বিষাৰ্ণবে নিমজ্জিত রহিয়াছে। পরমেশ প্রেম পরিহার পুরঃসর প্রতিক্ষণ প্রমদা প্রেমে প্ৰমত্ত রহিয়াছে। অসুবিন্ধুপম জীবনে চন্দ্রার্ক সদৃশ চিরস্থায়ী জ্ঞানে বিবিধ আনন্দোৎসব করিতেছে, কিন্তু ভ্ৰমেও ভাবনা করে না যে সেসব উৎসব শব হইলে কি হইবে } তার পরে বিদ্যাসাগর এই কঁচা ভাষায় চেহারার শ্ৰী ফুটিয়ে তুললেন । আমার মনে হয় তখন থেকে বাংলা গদ্যভাষায় রূপের আবির্ভাব হল । আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যিনি ঈশ্বর গুপ্তের আসরে প্রথম হাত পাকাচ্ছিলেন অত্যন্ত আড়ষ্ট বাংলা আৰু সেই ভাষাই বন্ধন মােচন করেছিলেন সেই বৃদ্ধি। তিনিই তাকে দেিয়ছিলেন সর *38RVO | আমরা পুরাতন সাহিত্যে পেয়েছি পদ্য, সেইটেই বনেদি । কিন্তু এ কথা বলা ঠিক হবে না, সাধু ভাষার আদর্শ ছিল তার মধ্যে । ভাষাকে ছন্দো-ওজন-করা পদে বিভক্ত করতে গেলে তার মধ্যে স্বাভাবিক কথা বলার নিয়ম খাটে না, ক্রমে তার একটা বিশেষ রীতি বেঁধে যায়। প্রথমত কর্তা-কর্ম-ক্রিয়াপদের সহজ পর্যায় রক্ষা হতেই পারে না । তার পরে তার মধ্যে কতকগুলি পুরোনো শব্দ ও রীতি থেকে যায়, ছন্দের আশ্ৰয় পেয়ে যারা কালের বদল মানে না। চারটি লাইন পদ্য বানিয়ে তার দৃষ্টান্ত দেখানো যাক কার সনে নাহি জানি করে বসি কানাকানি, সীঝবেলা দিগবন্ধুকাননে মর্মরে । আঁচলে কুড়ায়ে তারা কী লাগি আপনহারা, মানিকের বরমালা গাথে কার তরে । ১ সাহিত্যপরিষৎ-পত্রিকায় সজনীকান্তু দাস লিখিত ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ” প্ৰবন্ধ থেকে তুলে দেওয়া হল। --সাহিত্য পরিষৎ পত্রিক, ৪৫শ বর্ষ ১ম সংখ্যা, ১৩:৪৫, পৃ. ৪৬ ২ সংবাদপ্রভাকর, ২৩ এপ্রিল, ১৮৫২ । —বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাবলীর বদীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্কিম-শতবাৰ্ষিক, সংস্করণ, বিবিধ খণ্ড, পা ৬৮