পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় (፩ክrዒ এই কটা লাইনকে সাধু ভাষায় ঢালাই করতে গেলে হবে এইরকম- সন্ধ্যাকালে দিশুধু অরুণামর্মরধ্বনিতে কাহার সহিত বিশ্ৰাম্ভালপেপ্রবৃত্ত তাঁহাজানিনা। জানি নাকী কারণে ও কাহার জন্য আত্মবিহ্বল অবস্থায় সে আপনি বস্ত্ৰাঞ্চলে নক্ষত্রসংগ্রহপূর্বক মণিক্যের বরমাল্য গ্রন্থন করিতেছে। “সনে কথাটা এখন আর বলি নে, প্রাচীন পদাবলীতে ঐ অর্থে সঙে' কথা সর্বদা পাওয়া যায়। Y BBD DBD Du BD BDDBD DBB SDD DBB DBB BDB DOSSD LBK সংস্কৃত প্রতিশব্দ নাস্তি, চলিত কথায় ‘নেই’। ‘জানির সঙ্গে ‘নেই জোড়া যায় না, বলি জানি নে । ‘গাঝবেলা’ গ্ৰাম্যভাষায় এখনো চলে, কিন্তু যাদের জন্যে ঐ শ্লোকটা লেখা তাদের সঙ্গে আলাপে ‘সাববেলা’ শব্দটা বেখাপ । বসিয়ার জায়গায় বসি আমরা বলি নে । যে শ্রেণীর লোকের ভাষায় 'লেগে’ শব্দের ব্যবহার চলে তাদের খুশি করবার জন্যে দিশ্বধু কখনো তারার মালা গাথেই না। "জন্যের পরিবর্তে লাগি বা “লাগিয়া কিংবা তরে" শব্দটা ছন্দের মধ্যস্থতায় ছাড়া ভদ্রনামধারীদের রাসনায় প্রবেশ পায় না। যেমতি তেমতি নেহারো উড়িলা হেরো মোরে পানে যবে হেথা সেথা নারে তারে প্রভৃতি শব্দ পাদ্যের ফরমাশি । যদি বর্ষার দিনে বন্ধু এসে কথা জুড়ে দেয় হেরো ঐ পুব দিকের পানে,রহি রহি বিজুলি চমক দেয়, মোর ডর লাগে, নাহি জানি কী লাগি সাধ যায় তোমা সনে একা বসি মনের কথা করি। কানাকানি, তবে এটাকে মধুরালাপের ভূমিকা বলে কেউ মনে করবে না, বন্ধুর জন্যে উদবিগ্ন হবে। তবু মন ভোলাবার ব্যবসায়ে পদ্য যদি সাদা ভাষার বাজে মালমসলা মেশায় তবে তাকে মাপ করা যায়, কিন্তু চলতি ব্যবহারে গদ্য যদি হঠাৎ সাধু হয়ে ওঠে। তবে মহাপণ্ডিতেরাও মনে করবে, বিদ্রুপ করা হচ্ছে। কারও মসির 'পরে বিশেষ সন্মান দেখাবার জন্যে কেউ যদি বিশুদ্ধ সাধু ভাষায় বলে “আপনকার মাতৃস্বাসা আশা করি দুঃসাধ্য অতিসার ব্যাধি হইতে আরোগ্যলাভ করিয়াছেন, তবে বোনপো ইংরেজের মুখে শুনলে মনে মনে হাসবে, বাঙালির মুখে শুনলে উচ্চহাস্য করে উঠবে। তর্ক ওঠে, বাংলাদেশে কোন প্রদেশের ভাষাকে সাহিত্যিক কথ্যভাষা বলে মেনে নেব। উত্তর এই যে, কোনো বিশেষ কারণে বিশেষ প্রদেশের ভাষা স্বতই সর্বজনীনতার মর্যাদা পায় । যে-সকল সৌভাগ্যবান দেশে কোনো একমাত্র ভাষা বিনা তর্কে সর্বদেশের বাণীরূপে স্বীকৃত হয়েছে, সেখানেও নানা প্রাদেশিক উপভাষা আছে। বিশেষ কারণেীটসকানি প্রদেশের উপভাষা সমস্ত ইটালির এক ভাষা বলে গণ্য হয়েছে। তেমনি কলকাতা শহরের নিকটবতী চার দিকের ভাষা স্বভাবতই বাংলাদেশের সকলোদেশী ভাষা বলে গণ্য হয়েছে। এই এক ভাষার সর্বজনীনতা বাংলাদেশের কল্যাণের বিষয় বলেই মনে করা উচিত। এই ভাষায় ক্রমে পূর্ববঙ্গেরও হাত পড়তে আরম্ভ হয়েছে, তার একটা প্রমাণ এই যে আমরা দক্ষিণের লোকেরা সাথে শব্দটা কবিতায় ছাড়া সাহিত্যে বা মুখের আলাপে ব্যবহার করি নে। আমরা বলি সঙ্গে’ । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কানে যেমনি লাগুক, "সঙ্গে কথাটা সাথের কাছে হার মেনে আসছে। আরো একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ছে। মাত্র চারজন লোক : এমন প্রয়োগ আজকাল প্রায় শুনি । বরাবর বলে এসেছি। চারজনমাত্র লোক, অর্থাৎ চারজনের দ্বারা মাত্রা-পাওয়া, পরিমিত-হওয়া লোক । অবশ্য মাত্র শব্দ গোড়ায় বসলে কথাটাতে জোর দেবার সুবিধে হয়। ভাষা সব সময়ে যুক্তি মানে R | যা হােক, যে দক্ষিণী বাংলা লোকমুখে এবং সাহিত্যে চলে যাচ্ছে তাকেই আমরা বাংলা ভাষা বলে গণ্য করব। এবং আশা করব, সাধুভাবা তাকেই আসন ছেড়ে দিয়ে ঐতিহাসিক কবরস্থানে বিশ্রামলাভ করবে। সেই কবরস্থান তীর্থস্থান হবে, এবং অলংকৃত হবে তার স্মৃতিশিলাপট । δΣ মানুষের উদ্ভাবনী প্রতিভার একটা কীর্তি হল ঢাকা বানানো। ঢাকার সঙ্গে একটা নতুন চলৎশক্তি এল তার সংসারে। বস্তুর বােঝা সহজে নড়ে না, তাকে পরস্পরের মধ্যে চালাচালি করতে দুঃখ পেতে