পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংলাভাষা-পরিচয় (àY হসন্তের টানে শব্দগুলি গায়ে গায়ে লেগে যাবে না ; অর্থাৎ বাংলার স্বাভাবিক ধ্বনির নিয়ম এড়িয়ে চলতে হবে সতত হে নদ তুমি পড়ে মোর মনে, জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে । চলতি বাংলায় ‘নদী’ আর 'তুমি, ‘মোর আর "মনে হসন্তের বাধনে বাধা । এই পয়ারে ঐ শব্দগুলিকে হসন্ত বলে যে মানা হয় নি তা নয়, কিন্তু ওর বঁাধন আলগা করে দেওয়া হয়েছে। 'কানী আর "আমি","ভ্রাপ্তির' আর ছলনে হসম্ভের রীতিতে হওয়া উচিত ছিল যুক্ত শব্দ ; কিন্তু সাধু ছন্দের DBB gDDL SLO LBL DD SL DDBS একটা খাটি ছড়ার নমুনা দেখা যাক এ পার গঙ্গা ও পার গঙ্গা মধ্যিখানে চর, তারই মধ্যে বসে আছেন শিবু সদাগর। এটা পয়ার কিন্তু চোদ্দ অক্ষরের সীমানা পেরিয়ে গেছে। তবু উচ্চারণ মিলিয়ে বানান করলে চোদ্দ অক্ষরের বেশি হবে না এপাৰ্গঙ্গা ওপাৰ্গঙ্গা মধ্যিখানে চর, তারি মধ্যে বসে আছেন্সিবু সদাগর। ছড়ায় প্রায় দেখা যায় মাত্রার ঘনতা কোথাও কম, কোথাও বেশি। আবৃত্তিকারের উপর ছন্দ মিলিয়ে নেবার বরাত দেওয়া আছে। ছন্দের নিজের মধ্যে যে ঝোক আছে তার তাড়ায় কণ্ঠ আপনি প্রয়োজনমত স্বর বাড়ায় কমায়-- শিবু ঠাকুরের বিয়ে হবে তিন কন্যে দান । এখানে ‘বিয়ে হবে' শব্দে মাত্রা ঢিলে হয়ে গেছে। যদি থাকত ‘শিবু ঠাকুরের বিয়ের সভায় তিন কনো দান, তা হলে মাত্রা পুরো হত । কিন্তু বাংলাদেশের ছেলে বুড়ো এমন কেউ নেই যে, আপনিই 'বিয়ে- হবে- স্বরে টান না দেয় । বক ধলো, বস্ত্ৰ ধলো, ধলো রাজহংস, তাহার অধিক ধলো কন্যে তোমার হাতের শস্থ । দুটা লাইনের মাত্রার কমি-বেশি স্পষ্ট ; কিন্তু ভয়ের কারণ নেই, স্বতই আবৃত্তির টানে দুটাে লাইনের ওজন মিলে যায়। ছন্দে চলতি ভাষা আইন জারি না করেও আইন মানিয়ে নিতে পারে। ছেলে ভোলাবার ছড়া শুনলে একটা কথা স্পষ্ট বোঝা যায়, এতে অর্থের সংগতির দিকে একটুও দৃষ্টি নেই, দৃষ্টি দেবার দরকার বোধ করা হয় নি। যুক্তিবাধন-ছোড়া ছবিগুলো ছন্দের ঢেউয়ের উপর টগবগা করে ভেসে উঠছে, ভেসে যাচ্ছে। স্বপ্নের মতো একটা আকস্মিক ছবি আর-একটা ছবিকে জুটিয়ে আনছে। একটা শব্দের অনুপ্ৰাসে হােক বা আর-কোনো অনির্দিষ্ট কারণে হােক, আর-একটা শব্দ রবাহুত এসে পড়ছে। আধুনিক যুরোপীয় কাব্যে অবচেতন চিত্তের এই সমস্ত স্বপ্নের লীলাকে স্থান দেবার একটা প্রেরণা দেখা যায়। আধুনিক মনস্তৱে মানুষের মগ্নচৈতন্যের সক্রিয়তার উপর বিশেষ দৃষ্টি পড়েছে। চৈতন্যের সতর্কতা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বপ্নলোকের অসংলগ্ন স্বতঃসৃষ্টিকে কাব্যে উদ্ধার করে আনবার একটা প্ৰয়াস দেখতে পাই। নীচের ছড়াটির মতো এই জাতের রচনা কোনো আধুনিক কবির হাত দিয়ে বেরিয়েছে কি না জানি নে । খবর যা পেয়েছি তাতে জানা যায়, এর চেয়ে অসংলগ্ন रागबद्ध उछ्भग्र शाश् |- নেটন নোটন পায়রাগুলি ঝোঁটন রেখেছে, বড়ো সাহেবের বিবিগুলি নাইতে এসেছে । দুপারে দুই রুই কাৎলা ভেসে উঠেছে, দাদার হাতে কলম ছিল খুঁড়ে মেরেছে।