পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GV রবীন্দ্র-রচনাবলী আছে, সে বেশি নয়, অল্পই, যেমন : বিচার নিবাস কৃষাণ পিশাচ । একদা বাংলা ক্রিয়াপদে আ স্বরবর্ণের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল। করিলা চলিলা করিব যাইব । এইটেই নিয়ম ছিল। ইতিমধ্যেই উপদ্রব বধিয়ে দিলে। নিরীহ আকারকে সে শান্তিতে থাকতে দেয়। না ; দিলা কে করে তুলাল দিলে, “করিবা” হল করবে। বাংলা ক্রিয়াপদের সদ্য-অতীতে ইল প্রত্যয়ে বিকল্পে ও এবং এ লাগে, যেমন : করলো করলে । ‘করিলা হয়েছে করলো, ইকারের সঙ্গে সম্বন্ধ ছিন্ন করে। ‘করিলা থেকে করলে হয়েছে ইকারের শাসন মেনেই, অর্থাৎ আকে নিকটে পেয়েই তার যোগে একটা এ ঘটিয়েছে। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, দক্ষিণবঙ্গের কথ্য বাংলার কথা বলছি। এই ভাষায় ‘করিলাম। যদি করলেম হয়ে থাকে। সে তার স্বরবর্ণের প্রবৃত্তিবশত। এই কারণেই হইয়া হয়েছে হয়ে । বাংলায় উ স্বরবর্ণও খুব চঞ্চল। ইকার টেনে আনে এ স্বরকে, আর ও স্বরকে টানে উকার ; পট-+উআ=ি পোটাে । মাঝের উ ডাইনে বায়ে দিলে স্বর বদলিয়ে । শব্দের আদ্যক্ষরে যদি থাকে আ, তা হলে এই সব্যসাচী বা দিকে লাগায় এ, ডান দিকে ও । মাঠ’ শব্দে উআ প্রত্যয় যোগে ‘মাঠআ', হয়ে গেল। ‘মেঠো” ; “কাঠুআ থেকে “কেঠে। উকারের আত্মবিসর্জনের যেমন দৃষ্টান্ত দেখলুম, তার আত্মপ্রতিষ্ঠারও দৃষ্টান্ত আছে, যেমন : কুড়াল=কুড়ুল, উনান=উনুন। কোথাও বা আদ্যক্ষরের উকার পরবর্তী আকারকে ও করে দিয়ে নিজে ধাটি থাকে, যেমন : জুতা=জুতো, ওঁড়া=গুড়ো, পূজা=পুজো, সুতা=সুতো, ছুতার=ডুিতোর, কুমারী=কুমোর, উজাড়=উজোড়। উকারের পরবর্তী অকারকে অনেক স্থলেই উকার করে দেওয়া হয়। যেমন : পুতল=পুতুল, পুখর= পুখুর, RN=SR, Sry=9 | একটা কথা বলে রাখি, ইকারের সঙ্গে উকারের একটা যোগসাজশ আছে । তিন অক্ষরের কোনো শব্দের তৃতীয় বর্ণে যদি ই থাকে তা হলে সে মধ্যবর্ণের আীকে তাড়িয়ে সেখানে বিনা বিচারে উৎএর আসন করে দেয়। কিন্তু প্রথমবর্ণেউ কিংবাই থাকা চাই, যেমন : উড়ানি=উড়নি, নিড়ানি=নিড়নি, পিটানি=পিটুনি। কিন্তু “পেটানির বেলায় খাটে না ; কারণ ওটা একার, ইকার নয়। ‘মাতানির বেলায়ও এইরূপ। ‘খাটুনি হয়, যেহেতু ট'এ আকারের সংস্রব নেই। গাথুনি মাতুনি রাধুনিীরও উকার এসেছে অকারকে সরিয়ে দিয়ে। সেই নিয়মে ; এখুনি চিরুনি । চালানি শব্দে আকারকে মেরে উকার দখল পেলে না, কিন্তু চালনি শব্দে অকারকে ঠেলে ফেলে অনায়াসে হল চালুনি । উকারের ব্যবহার দেখলে মনে পড়ে কোকিলকে, সে যেখানে সেখানে পরের বাসায় ডিম পেড়ে शां । এও দেখা গেছে ইত্মা প্ৰত্যয়-ওয়ালা শব্দে ইকে ঠেলে উ অনধিকারে নিজে আসন জুড়ে বসে, GRAN : 町=甲和=西弧死 বাদল=বান্দলিয়া=বান্দুলে। এমনিতরো : নাটুকে মাতুনে | হাতুড়ে কাঠুরে সাপুড়ে হাঁটুরে ঘোসুড়ে ; এদের মধ্যে কোনো-একটা প্রত্যয় যোগের বা ড়ে এসে জুটেছে। লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, “ঘেসূড়ের ঘাসে লাগল একার, সাপুড়ের সাপ রইল নির্কিকার । ভাষাকে প্রশ্ন করলে এক-এক সময়ে ভালো জবাব পাই, এক-এক সময় পাইও নে। চাষ যে করে সে 'চাবুড়ে হল না কেন । আমার হিন্দিভাষী বন্ধু বলেন, বাংলায় "সাপুড়ে ; হিন্দিতে ; সঁপেরা=সাপ+হারা। বাংলা “কাঠারো হিন্দিতে "লকড়হারা, হিন্দিতে ‘কাঁঠহারা কথা নেই। হিন্দির এই হারা তদ্ধিত প্ৰত্যয় ; অধিকার অর্থে এর প্রয়োগ, ক্রিয়া অর্থে নয়। বোধ করি সেই কারণে চামুড়ে শব্দটা সম্ভব হয় নি। স্বরবিকারের আর-একটা অদ্ভুত দৃষ্টান্ত দেখো। ইআ প্ৰত্যয়-যোগে একটা ওকার খামখা হয়ে গেল উ ; গোবোর+ইয়া=গুবরে, কেঁদোল+ইয়া=স্কুলে। ‘কুঁদলে হল না কেন সেও একটা প্রশ্ন । ‘গোবোর থেকে ওকারটাকে হসন্তের ঘায়ে তাড়িয়ে দিলে। ‘কেঁদোল শব্দেও হসন্তকে জায়গা না দিয়ে, নিজে বসিল জমিয়ে । আকারের প্রতি উপেক্ষা সম্বন্ধে আরো প্রমাণ দেওয়া যায়। হাত বুলিয়ে সন্ধান করাকে হলে