পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V9ềO রবীন্দ্র-রচনাবলী কাত্তিকটি, যেন ডানাকাটা পরী। বাংলায় বিদুপের ভঙ্গিরীতি অত্যন্ত সুলভ । “তেন শব্দের ব্যবহার লোপ পেয়েছে। ‘হেন শব্দের অর্থ মতো কিংবা ‘এই মতো। এর সঙ্গে তুলনা করলে বােঝা যায় ‘তেন' শব্দের অর্থ 'সেইমতো। 'হেনতেন জোড়া শব্দ এখনো চলিত আছে । হেন-তেন। কত কী বাঁকে গেল ; অর্থাৎ, বাকল কখনো এরকম কখনো সেরকম, অসংলগ্ন বকুনি। প্রাচীন বাংলায় দেখেছি যেন কন্যা তেন বর। এখানে যেন শব্দের ‘যে-হেন অর্থ “যেন শব্দটা ‘‘হেন শব্দের জুড়ি । পদাবলীতে পাওয়া গেছে, ‘যেহ্নে (যে-হেন)। বোঝা যায়। এই 'হেন শব্দের যোগেই যেন” শব্দ চেহারা পেয়েছে। আধুনিক বাংলায় যেন শব্দটা তুলনা-উপমার কাজেই লাগে, কিন্তু পুরাতন বাংলায় তার অর্থের বিকৃতি হয় নি। তখন তার অর্থ ছিল যেমন : যেন যায়। তেন আইসে, যেন রাজা তেন দেশ । হেন শব্দটা রয়ে গেছে ভাষার মহাদাশ্ৰয় পদ্যে। কিন্তু “সে কিংবা ‘এ’ শব্দের যোগে এখনো চলে। যেমন : সে-হেন লোক । এই ‘হেন শব্দের যোগে ঐ ‘সে শব্দে অক্ষমতা বা অসম্মানের আভাস দেয় । যেমন : সে-হেন লোক দৌড় মারলে। “হেন শব্দের যোগে ‘এ’ শব্দে অসামান্যতা বোঝায়, যেমন : এ-হেন লোক দেখা যায় না, এ-হেন দুর্দশাতেও মানুষ পড়ে । ‘কেনার সঙ্গে “যে যোগ করলে পরিতাপ বা ভৎসনার ভঙ্গি আসে, যেমন : কেন যে মরতে আসা, কেন যে এতগুলো পাস করলে। "কী করতে” শব্দটারও ঐরকম ঝোক, অর্থাৎ তাতে আছে ব্যর্থতার GyVV5 | শুধু "কী" শব্দের মধ্যেও এই রকমের ভঙ্গি। এই কাজে ওর সঙ্গে যোগ দেয়ই অব্যয় : কী চেহারাই করেছি, কী কবিতাই লিখেছেন, কী সাধুগিরিই শিখেছি। ঐ ‘কী এর সঙ্গে ‘বা’ যোগ করলে ঝােজ আরো বাড়ে। কী বাকে বঁকিয়ে কীবে করলে ভঙ্গিতে আরো বিদ্রুপ পেঁৗছয়। ইর সহযোগিতা বাদ দিলে ‘কী বিশুদ্ধ বিস্ময় প্রকাশের কাজে লাগে : কী সুন্দর তার মুখ । সন্মান খর্ব করবার বিশেষ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় যথেষ্ট পাওয়া গেল, সর্বনামের প্রয়োগেও বক্রোক্তি দেখা গেছে। কিন্তু শ্ৰদ্ধা বা প্ৰশংসা-প্রকাশের প্রয়োজনে ভাষায় কেবল একটা বিশেষ ভঙ্গি আছে "আহ অব্যয় শব্দটার যোগে, যেমন : আহা মানুষটি বড়ো ভালো। করুশ প্রকাশেও এর ব্যবহার আছে। অথচ "আহামরি’ শব্দের পরিণামটা ভালো হয় নি। গোড়ায় এর উদ্দেশ্য ভালোই ছিল, এখন এ শব্দটার যে প্রকৃত স্বভাব সেইটাই গেছে বিপরীত হয়ে। এটা হয়েছে বিদ্যুপের বাহন। ওটাকে আরো একটু প্রশস্ত করে হল ‘আহা মরে যাই ; এর বঁাজ আরো বেশি। পদে পদে বাংলায় এই বঁকা ভঙ্গিটা এসে পড়ে ; ভারি তো পণ্ডিত, ম-স্ত নবাব। এদের কণ্ঠস্বর উৎসাহে দীর্ঘকৃত হয়ে গাল পড়ে যথার্থ মানেটাকে ডিঙিয়ে। ইদারাম ভেঁাদারাম বোকারাম ভ্যাবাগঙ্গারাম শব্দগুলোর ব্যবহার চূড়ান্ত মুঢ়তা প্রকাশের জন্যে। কিন্তু “সুবুদ্ধিরাম সুপটুরাম বলবার প্রয়োজনমাত্র ভাষা অনুভব করে না। সবচেয়ে অদ্ভুত এই যে রাম শব্দের সঙ্গেই যত বোকা বিশেষণের যোগ, “বোকা লক্ষ্মণ বলতে কারও झष्ट्रि झग्न मा । “কি যেখানে অব্যয় সেখানে প্রশ্নের সংকেত । উহ্য বিশেষ্যের সহযোগে বিশেষণে ওর প্রয়োগ আছে। তুমি কী করছ ; অর্থাৎ "কী কাজ করছ। আর-একটা প্রয়োগ বিস্ময় বোঝাতে যেমন : কী সুন্দর। পূর্বেই বলেছি তীক্ষধার স্বরবর্ণ ই সঙ্গে না থাকলে এর সৌজন্য বজায় থাকে ! বিশেষণ-প্রয়োগে ‘কী, যথা : কী কাজে লাগবে জানি নে । ‘কী, বিশেষণ শব্দে অচেতন বা নির্বস্তুক বা অনির্দিষ্ট বোঝায় ; ওর কী দশা হবে, কী হতে কী হল। বিকল্প বোঝাতে ওর প্রয়োগ আছে, যেমন : কী রাম কী শ্যাম কাউকেই বাদ দেওয়া যায় না। “কোন বিশেষণ জড় চেতন দুইয়েই লাগে । সর্বনামের কর্মকারকে সাধারণত কে বিভক্তি ; আমাকে তোমাকে । “সের বেলায় ‘তাকে কিংবা ‘সেটিকে” “সেটাকে । বাংলা সর্বনাম করণকারকে একটা বিভক্তির উপরে আর-একটি চিহ্ন জোড়া হয়। বিভক্তিটা সম্বন্ধপদের, যেমন ‘আমার, ওতে জোড়া হয় ‘দ্বারা’ শব্দ ; আমার দ্বারা। আর-একটা শব্দচিহ্ন আছে