পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় ty ঐ গাছটা কী বটে, এই নদী গঙ্গাই বটে। ‘বটে’ শব্দটা এখনো ভাষায় আছে, বিশেষ ক্টোক দেবার জন্যে, যেমন : লোকটা ধনী বটে। আবার ভঙ্গির কাজেও লাগে, যেমন : বটে, চালাকি পেয়েছ ! ‘বটের সঙ্গে কিন্তুর যোগ হলে ভঙ্গিটা আরো জমে, যেমন : উনি সর্দারি করেন বটে। কিন্তু টের পাবেন । ইংরেজিতে স্বভাব বা অবস্থা বোঝাতে is বা are ব্যতীত বিশেষ্যের গতি নেই, বাংলায় তা YSS DBBB DB D LL LL LLLLLLLLS DB DBLB D BDDBSL DL BB DD BB DDD বোঝাবে, তার খোড়া অবস্থােটা একটা বিশেষ আবিষ্কার, নয় ওর সঙ্গে একটা অসংগত ব্যাপারের যোগ আছে। যেমন : ও খোড়া বটে কিন্তু দীেড়য় খুব। কিংবা সন্দেহের বিদ্রুপ প্রকাশ করে : তুমি খোড়া z veře, cš R8 GR ve se po Pif | বাংলায় থাকার কথাটা যখন জানাই তখন বলি- আছি বা আছে, ছিলে ছিল বা ছিলুম। ‘আছিল। শব্দেরই সংক্ষেপ ছিল । কিন্তু ভবিষ্যতের বেলায় হয় “থাকব । বাংলায় ক্রিয়াপদের রূপ প্রধানত এই থাকার ভাবকে আশ্রয় করে । করেছে করছে করেছিল করছিল-শব্দগুলো ‘আছি ক্রিয়াপদকে ভিত্তি করে স্থিতির অর্থকেই মুখ্য করেছে। সংস্কৃত ভাষায় এটা নেই, গৌড়ীয় ভাষায় আছে। হিন্দিতে বলে 'চলা থা, চলেছিল। কাজটা যদিও চলা, তবু থা। শব্দে বলা হচ্ছে, চলার অবস্থাতে স্থিতি করেছিল। গতিটা যেন স্থিতির উপরেই প্রতিষ্ঠিত । যে কাজকে নির্দেশ করা হচ্ছে প্রধানত সেই কাজের মূল ধাতুকে দিয়েই ক্রিয়াপদের গড়ন । ‘খ’ ধাতুতে খাওয়া বোঝায়, খাওয়া কাজের সমস্ত ক্রিয়ারূপ এই ধাতুর যোগেই তৈরি । কিন্তু বাংলা ভাষায় অনেক স্থলে কাৰ্যটা ক্রিয়ার রূপ ধরে নি। ক্ষুধা পাওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া, প্ৰতি দিনের ঘটনা ; অথচ বাংলায় সেটা ক্রিয়ারূপ নেয় নি, বিশেষ্যের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বলতে হয় : ক্ষুধা পেল, তৃষ্ণা পেল। হওয়া উচিত ছিল “ক্ষুধিলা তুষিল, কাব্যে এইরকম ক্রিয়ারূপের কোনো বাধা নেই। কিন্তু গদ্য বাংলায় ক্রিয়াপদকে অনেক স্থলে গোটা বিশেষ্যপদের ভার বয়ে বেড়াতে হয় । বাংলায় দুটাে ক্রিয়াপদ জুড়ে ক্রিয়াবিশেষণ গড়ার একটা রীতি আছে। তাতে যে ইঙ্গিতের ভাষা তৈরি হয়েছে তার ভাবপ্রকাশের শক্তি অসাধারণ । সামান্য এই কথাটা রয়ে বসে কাজ করা যা বলে তা কোনো বাধা সংস্কৃত শব্দে বলাই যায় না। উঠেপড়ে, উঠেহেঁটে কিংবা ‘নেচকুদে বেড়ানোতে ফুর্তি প্ৰকাশ পায় সেটার ঠিক উপযুক্ত শব্দ অভিধানে খুঁজে পাওয়া যায় না। এদের স্বজাতীয় শব্দ ; তেড়েফুড়ে কেটেছেটে বেঁচেবর্তে রয়েসয়ে হেসেখেলে। এমন আরো বিস্তর আছে। অনেক স্থলে ঐ জোড়া শব্দের দুটিতে অর্থের সাম্য থাকে না। বস্তুত ওগুলো শব্দযোজনার একরকম খেপামি । ‘বেয়েছেয়ে দেখায় যা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে বাওয়া এবং ছাওয়ার কোনো সম্পর্কই নেই । যখন বলি ‘নেড়েচেড়ে দেখতে হবে তখন “নেড়ে' শব্দের সহচরটিকে ব্যবহার করা হয়। অর্থহীন বাটখারার মতো ওজন ভারী করবার জন্যে । চেয়েচিন্তে কেঁদে কেটে : এরা আছে অনুপ্রাসের গাঠ ধাধার কাজে । ঐটেসেঁটে খেটে খুটে খেয়েদেয়ে ঠেলেঠলে ; এরা ধ্বনির পুনরাবৃত্তিতে মনকে ঠেলে দেবার কাজ (as আর-একরকম ক্রিয়াবিশেষণ আছে পদকে দুনো করে দিয়ে । যেমন, “জর হবে হবে' কিংবা ‘জর জ্বর করছে । মনটা ‘পালাই পালাই করে । এর মধ্যে খানিকটা অনিশ্চয়তা অর্থাৎ হওয়ার কাছাকাছি ভাব আছে। "লড়াই লড়াই খেলা সত্যিকার লড়াই নয়। কিন্তু যেন লড়াই। হতে হতে হল না। অর্থাৎ হতে গিয়ে হল না । এতে যেমন জোর কমায়, আবার কোনো স্থলে জোর বাড়ায় ; দেখতে দেখতে জল বেড়ে গেল, হাতে হাতে ফল পাওয়া । সরে সরে যাওয়া, চলে চলে ক্লান্ত, কেঁদে কেঁদে চোখ লাল, পিছু পিছু চলা, কাছে কাছে থাকা : এই দ্বিত্বে নিরন্তরতার ভাব পাওয়া যায়, কিন্তু একটানা নিরন্তরতা নয়, এর মধ্যে একটা বারংবারন্থ আছে। ‘পাতে-পাতেই মাছের মুড়ে দেওয়া হয়েছে, বললে মনে হয় সেটা যেন একে একে পরে পরে গণনীয় । ‘পাথরটা পড়ি পড়ি করছে, কোনো কালেই হয়তো পড়বে না, কিন্তু প্ৰত্যেক মুহূর্তে বারে বারে তার ভাবখানা পড়বার মতো। আপনি আপনিই তিনি বকে যাচ্ছেন বললে কেবল যে স্বাগত ককা বোঝায় তা নয়, বোঝায় পুনঃপুনঃ ককা। এরকম