পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WSo রবীন্দ্র-রচনাবলী সুর লাগানাে যায়। কী গো কেন গোঁ শব্দে বিরূপ চলে ; কেন গো, এত রাগ কেন; কেন গো তোমার যে দেখি গাছে কঁঠাল গীেপে তেল ; কী গো, এত রাগ কেন গো মশায় ; কী গো, হলফ্ট তোমার। ভয় বা দুঃখ-প্রকাশে মেয়েদের মুখে কী হবে গো, কিংবা অনুনয়ে “এক ফেলে যেয়ে না। গো । 'ইগা' কেনে গা গ্ৰাম্য ভাষায় । শুধু ‘হে শব্দ আহবান অর্থে সাহিত্যেই আছে। মুখের কথায় চলে "ওহে । কিংবা প্রশ্নের ভাবে , কে হে, কেন হে, কী হে। অনুজ্ঞায় চলো হে। মাননীয়দের সম্বন্ধে এই 'ওহের ব্যবহার নেই। তুমি তোমার সঙ্গেই এর চল, “আপনি বা ‘তুই’ শব্দের সঙ্গে নয়। ‘রে’ শব্দ অসম্মানে কিংবা স্নেহপ্রকাশে ; ই রে, কেন রে, ওরে বেটা ভূত, ওরে হতভাগা, ওরে সর্বনেশে। এর সম্বন্ধ “তুই “তোরার সঙ্গে । ‘লো “লা মেয়েদের মুখের সম্বোধন । এও ‘তুই’ শব্দের যোগে । ভদ্রমহল থেকে ক্রমশ এর চলন গেছে উঠে । অব্যয় শব্দ আরো অনেক আছে, কিন্তু এইখনেই শেষ করা যাক । S ভাষার প্রকৃতির মধ্যে একটা গৃহিণীপনা আছে। নতুন শব্দ বানাবার সময় অনেক স্থলেই একই শব্দে কিছু মালমসলা যোগ করে কিংবা দুটাে-তিনটে শব্দ পাশাপাশি আঁট করে দিয়ে তাদের বিশেষ ব্যবহারে লাগিয়ে দেয়, নইলে তার ভাণ্ডারে জায়গা হত না। এই কাজে সংস্কৃত ভাষার নৈপুণ অসাধারণ | ব্যবস্থাবন্ধনের নিয়মে তার মতো সতর্কতা দেখা যায় না। বাংলা ভাষায় নিয়মের খবরদারি যথেষ্ট পাকা নয়, কিন্তু সেও কতকগুলো নির্মােণরীতি বানিয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলোকে সমাসের পর্যায়ে ফেলা যায়, যেমন : চটামেজাজ নাকিসুর তোলাউনুন ভোলামন । এগুলো হল বিশেষ্য-বিশেষণের জোড় । বিশেষণগুলো ও ক্রিয়াপদকে প্রত্যয়ের শান দিয়ে বসানো । সেও একটা মিতব্যয়িতার কীেশাল। বদমেজাজি ভালোমানুষি তিনিমহলা, এগারোহাতি (শাড়ি) : এখানে জোড়া শব্দের শেষ অংশীদারের পিঠে ইকারের আকারের ছাপ লাগিয়ে দিয়ে তাকে এক শ্রেণীর বিশেষ্য থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে আর-এক শ্রেণীর বিশেষ্যে । অবশেষে সেই বিশেষ্যের গোড়ার দিকে বিশেষণ যোগ করে তাকে বিশেষত্ব দিয়েছে। অবিকৃত বিশেষ্য-বিশেষণের মিলন ঘটানো হয়েছে সহজেই ; তার দৃষ্টান্ত অনাবশ্যক। বিশেষ্যের সঙ্গে বিশেষ্য গেঁথে সংস্কৃত বহুব্রীহি মধ্যপদলোপী কর্মধারায়ের মতো এক-একটা বাক্যাংশকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। যেমন ‘পুজোবাড়ি', অর্থাৎ পুজো হচ্ছে যে বাড়িতে সেই বাড়ি। কাঠকয়লা : কাঠ পুড়িয়ে যে কয়লা হয় সেই কয়লা। হাঁটুজল : হাঁটু পর্যন্ত গভীর যে জল সেই জল। মািটকোঠা : মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে যে কোঠা । দুই বিশেষণের যোগে যে সমাস তারওঁ গ্ৰন্থি ছাড়িয়ে দিলে অর্থের ব্যাখ্যা বিস্তৃত হয়ে পড়ে ; যেমন : র্কাচামিঠে ; কঁচা। তবুও মিষ্টি ! বাদশাহি-কুঁড়ে ; বাদশার সমতুল্য তার কুঁড়েমি । সেয়ান-বোকা : লোকটাকে বোকার মতো দেখায় কিন্তু আসলে সেয়ানা । বিশেষ্য এবং ক্রিয়া থেকে বিশেষণ-করা শব্দের যোগ, যেমন : পটলচেরা : অর্থাৎ পটল চিরলে যে গড়ন পাওয়া যায়। সেই গড়নের । কাঠঠোকরা ; কাঠে যে ঠোকর মারে ; চুলচেরা : চুল চিরলে সে যত সূক্ষ্ম হয় তত সূক্ষ্ম । কিন্তু’ শব্দরচনায় বাংলা ভাষার নিজের বিশেষত্ব আছে, তার আলোচনা করা যাক । বাংলা ভঙ্গিওয়ালা ভাষা । ভাবপ্রকাশের এরকম সাহিত্যিক রীতি অন্য কোনো ভাষায় আমার জান; (SS অর্থহীন ধ্বনিসমবায়ে শব্দরচনার দিকে এই ভাষায় যে ঝোক আছে তার আলোচনা পূর্বেই করেছি। আমাদের বোধশক্তি যে শব্দার্থজালে ধরা দিতে চায় না বাংলা ভাষা তাকে সেই অর্থের বর্ষণ