পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外侬团开邻刚 যাত্রার পূর্বপত্র মাঠের মাঝখানে এই আমাদের আশ্রমের বিদ্যালয়। এখানে আমরা বড়োয় ছোটোয় একসঙ্গে থাকি, ছাত্র ও শিক্ষকে এক ঘরে শয়ন করি, তেমনি এখানে আরো আমাদের সঙ্গী আছে ; আকাশ আলোক এবং বাতাসের সঙ্গেও আমরা কোনো আড়ালের সম্পর্ক রাখি নাই। এখানে ভোরের আলো একেবারে আমাদের চোখের উপর আসিয়া পড়ে, আকাশের তারা একেবারে আমাদের মুখের উপর তাকাইয়া থাকে। ঝড় যখন আসে সে একেবারে দিকপ্রান্তে ধুলার উত্তরীয় দুলাইয়া বহু দূর হইতে আমাদের খবর দিতে থাকে। কোনো ঋতু যখন আসন্ন হয় তখন তাহার প্রথম সংবাদটি আমাদের গাছের পত্রে পত্রে প্রকাশিত হয়। বিশ্বপ্রকৃতিকে এক মুহুর্ত আমাদের দ্বারের বাহিরে অপেক্ষা করিতে इ२ न । আমাদের ইচ্ছা পৃথিবীর মানুষের সঙ্গেও আমাদের এমনি একটা যোগ থাকে। সর্বমানুষের ইতিহাসে যে-সমস্ত ঋতু আসে-যায়, সূর্যের যে উদয়ান্ত ঘটে, ঝড়-বাদলের যে মাতামতি চলে, সমস্তকেই যেন আমরা স্পষ্ট করিয়া এবং বড়ো আকাশের মধ্যে বড়ো করিয়া দেখিতে পাই, ইহাই আমাদের মনের বাসনা। আমরা লোকালয় হইতে দূরে আছি বলিয়াই আমাদের এই সুযোগ আছে। পৃথিবীর সমস্ত সংবাদ এখানে কোনো একটি ইচের মধ্যে আসিয়া পড়িতে পায় না, আমরা ইচ্ছা! করিলে তাহাকে অবাধে বিশুদ্ধ রূপে গ্ৰহণ করিতে পারি। মানুষের জগতের সঙ্গে আমাদের এই মাঠের বিদ্যালয়ের সম্বন্ধটিকে অবারিত করিবার জন্য পৃথিবী প্ৰদক্ষিণ করিবার প্রয়োজন অনুভব করি। আমরা সেই বড়ো পৃথিবীর নিমন্ত্রণের পত্র পাইয়াছি। কিন্তু, সেই নিমন্ত্ৰণ তো বিদ্যালয়ের দুইশো ছাত্র মিলিয়া রক্ষা করিতে যাইতে পারিব না। তাই স্থির করিয়াছিলাম, তোমাদের হইয়া আমি একলাই এই নিমন্ত্রণ রক্ষা করিয়া আসিব । আমার একলার মধ্যেই তোমাদের সকলের ভ্রমণ সারিয়া লইব । যখন আবার তোমাদের আশ্রমে ফিরিয়া আসিব তখন বাহিরের পৃথিবীটাকে আমার জীবনের মধ্যে অনেকটা পরিমাণে ভরিয়া আনিতে পারিব। যখন ফিরিব তখন অবকাশমত অনেক কথা হইবে, এখন বিদায়ের সময় দুই-একটা কথা পরিষ্কার করিয়া যাইতে চাই । আমাকে অনেকেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি যুরোপে ভ্ৰমণ করিতে যাইতেহ কেন।” এ কথায় কী জবাব দিব ভাবিয়া পাই না। ভ্ৰমণ করাই ভ্ৰমণ করিতে যাইবার উদ্দেশ্য, এমন একটা সরল উত্তর যদি দিই। তবে প্ৰশ্নকর্তারা নিশ্চয় মনে করবেন, কথাটাকে নিতান্ত হালকারকম করিয়া উড়াইয়া দিলাম। ফলাফল বিচার করিয়া লাভ-লোকসানের হিসাব না। ধরিয়া দিতে পারিলে, মানুষকে ঠাণ্ড করা या नां । " প্রয়োজন না থাকিলে মানুষ অকস্মাৎ কেন বাহিরে যাইবে, এ প্রশ্নটা আমাদের দেশেই সম্ভব। বাহিরে যাইবার ইচ্ছাটাই যে মানুষের স্বভাবসিদ্ধ, এ কথাটা আমরা একেবারে ভুলিয়া গিয়াছি। কেবলমাত্র ঘর আমাদিগকে এত বাধনে এমন করিয়া বাধিয়াছে, চৌকাঠের বাহিরে পা বাড়াইবার সময় আমাদের এত অযাত্রা, এত অবেলা, এত হাঁচি টিকটিকি, এত আশ্রপাত যে, বাহির আমাদের পক্ষে অত্যন্তই বাহির হইয়া পড়িয়ছে, ঘরের সঙ্গে তাহার সম্বন্ধ অত্যন্ত বিচ্ছিল্প হইয়াছে। আীয়মণ্ডলী