পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GyI রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার পক্ষে কেবল চোখের জানা ছিল, কিন্তু হৃদয়ের জানা হইতে বঙ্কিত ছিলাম- সেইজন্যই আনন্দের ব্যাঘাত হইতেছিল। ডোভারে পা দিতেই আমার মনে হইল, সেই ব্যাঘাত আমার কাটিয়া গেল ; যেখানে দাড়াইলাম। সেখানে কেবল যে মাটির উপর দাড়াইলাম তাহা নহে, মানুষের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করলাম । অনেক কাল পরে লন্ডনে আসিলাম । তখনো লন্ডনের রাস্তায় যথেষ্ট ভিড় দেখিয়ছি, কিন্তু এখন মোটর-গাড়ির একটা নূতন উপসর্গ জুটিয়াছে। তাঁহাতে শহরের ব্যস্ততা আরো প্রবলভাবে মূর্তিমান হইয়া উঠিয়াছে। মোটর-রথ, মোটর-বিশ্বম্বহু (অগ্নিবাস), মোটর-মালগাড়ি লন্ডনের নাড়ীতে নাড়ীতে শতধারায় দুটিয়া চলিতেছে। আমি ভাবি, লন্ডনের সমন্ত রাস্তার ভিতর দিয়া কেবলমাত্র এই চলিবার বেগ পরিমাণে কী ভয়ানক প্ৰকাণ্ড ! যে মনের বেগের ইহা বাহ্যমূর্তি তাহাঁই বা কী ভীষণ । দেশ-কালকে লইয়া কী প্রচণ্ড বলে ইহারা টানাটানি করিতেছে। পথ দিয়া পদাতিক যাহারা চলিতেছে প্রতিদিন তাহদের সতর্কতা তীব্রতর হইয়া উঠিতেছে। মন অন্য যে-কোনো ভাবনাই ভাবুক-না-কেন, তাহার সঙ্গে সঙ্গে বাহিরের এই বিচিত্র গতিবিধির সঙ্গে তাহাকে প্রতিনিয়ত আপিস করিয়া চলিতে হইবে। হিসাবের ভুল হইলেই বিপদ। হিংস্র পশুর হাত হইতে পরিত্রাণ পাইবার প্রয়াসে হরিণের সতর্কতাবৃত্তি যেমন প্রখর হইয়া উঠিয়াছে, চারিদিকে ব্যস্ততার তাড়া খাইয়া খাইয়া এখানকার মানুষের সাবধানত তেমনি অসামান্য তীক্ষ্ণতা লাভ করিতেছে। দ্রুত দেখা, দ্রুত শোনা ও দ্রুত চিন্তা করিয়া কর্তব্য স্থির করিবার শক্তি কেবলই বাড়িয়া উঠিতেছে। দেখিতে শুনিতে ও ভাবিতে যাহার সময় লাগে সেই এখানে হঠিয়া যাইবে । । ক্ৰমে বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ঘটতেছে। যে যত্ন ও গ্ৰীতি পাইতেছি তাহা বিদেশীর হাত হইতে পাইতেছি বলিয়া আমার কাছে দ্বিগুণ মূল্যবান হইয়া উঠিতেছে ; মানুষ যে মানুষের কত নিকটের তাহা BBDLB DDD D DDB BDD BDDBD BB DKzS ইতিমধ্যে একদিন আমি ’নেশন’ পত্রের মাধ্যাহ্নভোজে আহূত হইয়াছিলাম। নেশন এখানকার উদারপন্থীদের প্রধান সাপ্তাহিক পত্র। ইংলন্ডে যে-সকল মহাত্মা স্বদেশ ও বিদেশ, স্বজাতি ও পরজাতিকে স্বার্থপরতার ঝুটা বাটখারায় মাপিয়া বিচার করেন না, অন্যায়কে যাহারা কোনো ছুতায় কোথাও আশ্রয় দিতে চান না, র্যাহারা সমস্ত মানবের অকৃত্রিম বন্ধু, নেশন তাহদেরই বাণী বহন করিবার জন্য নিযুক্ত । নেশন পত্রের সম্পাদক ও লেখকেরা সপ্তাহে একদিন মধ্যাহ্নভোজে একত্র হন । এখানে তাহারা আহার করিতে করিতে আলাপ করেন ও আহারান্ত আগামী সপ্তাহের প্রবন্ধের বিষয় লইয়া আলোচনা করিয়া থাকেন। বলা বাহুল্য, এরূপ প্ৰথম শ্রেণীর সংবাদপত্রের লেখকেরা সকলেই পণ্ডিত্যে ও দক্ষতায় অসামান্য ব্যক্তি । সেদিন ইহাদের আলোচনা-ভোজে স্থান পাইয়া আমি বড়োই আনন্দ লাভ করিয়াছি । ইহাদের মধ্যে বসিয়া আমার বারংবার কেবল এই কথাই মনে হইতে লাগিল যে, ইহারা সকলেই জানেন ইহাদের প্রত্যেকের একটি সত্যকার দায়িত্ব আছে । ইহারা কেবল বাক্য রচনা করিতেছেন না, ইহাদের প্রত্যেক প্ৰবন্ধ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যতরীর হালটাকে ডাইনে বা বায়ে কিছু না-কিছু টান দিতেছেই । এমন অবস্থায় লেখক লেখার মধ্যে আপনার সমন্ত চিত্তকে প্রয়োগ না করিয়া থাকিতে পারেন না । আমাদের দেশে খবরের কাগজে তাহার কোনো প্রয়োজন নাই ; আমরা লেখকের কাছে কোনো দায়িত্ব দাবি করি না, এই কারণে লেখকের শক্তি সম্পূৰ্ণ আলস্য ত্যাগ করে না ও ফাকি দিয়া কােজ সারিয়া দেয় । এইজন্য আমাদের সম্পাদকরা লেখকদের শিক্ষা ও সতর্কতার কোনো প্রয়োজন দেখেন না, যে-সে লোক যাহ-তাহা লেখেন এবং পাঠকেরা তাহা নিবিচারে পড়িয়া যান। আমরা সত্যক্ষেত্রে চাব করিতেছি না বলিয়াই আমাদের মঞ্জরীতে শস্য-অংশ অতি সামান্য দেখা যায়-মনের খাদ্য পুরাপুরি If a আমাদের দেশে রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনাসভা আমি দেখিয়ছি ; তাহতে কথার