পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vryr রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্যবহার সম্বন্ধে আমাদের কতকগুলা বাধা নিয়ম আছে। সেই সীমার দিকে দৃষ্টি রাখিয়াই আমাদের কী করিতে আছে এবং কী করিতে নাই তাহা নির্দিষ্ট হইয়াছে। সেই নিয়মগুলির মধ্যে অনেক কৃত্রিমতাও আছে, অনেক স্বাভাবিকতাও আছে। কিন্তু, যে সমাজের প্রতি লক্ষ্য করিয়া এই নিয়মগুলি তৈরি হইয়াছে সেই সমাজের পরিধি বড়ো নহে এবং সে সমাজ আমীয়সমাজ । সুতরাং আমাদের আদবাকায়দাগুলি ঘোরো রকমের। বাবার সামনে তামাক খাইতে নাই, গুরুঠাকুরের পায়ের ধূলা লইয়া ঠাঁহাকে দক্ষিণা দেওয়া কর্তব্য, ভাসুরকে দেখিলে মুখ আবৃত করা চাই এবং মামাশ্বশুরের নিকটসংস্রব বর্জনীয়। এই পরিবার বা পল্পীমণ্ডলীর বাহিরে যে নিয়মের ধারা চলিয়াছে তাহা মোটের উপর বর্ণভেদমূলক । বলিতে গেলে বর্ণাশ্রমের সূত্র আমাদের পল্লীসমাজ ও পরিবারামণ্ডলীকে হারের মতো গাঁথিয়া তুলিয়াছে। আমরা একটা সমাপ্তিতে আসিয়াছি। ভারতবর্ষ তাহার সমাজে সমস্যার একটা সম্পূর্ণ সমাধান করিয়া বসিয়াছে এবং মনে করিয়াছে, এই ব্যবস্থাকে চিরকালের মতো পাকা করিয়া রাখিতে পারিলেই তাহার আর-কোনো ভাবনা নাই। এইজন্য বর্ণাশ্রমসূত্রের দ্বারা পরিবার-সমাজকে বাধিয়া রাখিবার বিধানকে সকল দিক হইতে দৃঢ় করিবার দিকেই আধুনিক ভারতবর্ষের সমস্ত চেষ্টা কাজ कब्रिशांछि । ভারতবর্ষের সম্মুখে যে সমস্যা ছিল ভারতবর্ষ তাহার একটা-কোনো সমাধানে আসিয়া পেঁৗছতে পারিয়াছিল, এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে । বিচিত্র জাতির বিরোধকে সে এক রকম করিয়া মিটাইয়াছে, বিচিত্র শ্রেণীর বিরোধকে সে এক রকম করিয়া ঠাণ্ডা করিয়াছে ; বৃত্তিভেদের দ্বারা ভারতবর্ষে প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্বযুদ্ধকে নিবৃত্ত করিয়াছে এবং ধন ও ক্ষমতার পার্থক্য যে অভিমানকে সৃষ্টি করে জাতিভেদের বেড়ার দ্বারা তাহার সংঘাতকে সে ঠেকাইয়াছে। এক দিকে যদিও ভারতবর্ষ সমাজের নেতা ব্ৰাহ্মণদের সহিত অন্য বর্ণের স্বাতন্ত্র্যাকে সর্বপ্রকার উপায়ে অভ্ৰভেদী করিয়া তুলিয়াছে, অন্য দিকে তেমনি সমস্ত সুখসুবিধা-শিক্ষাদীক্ষাকে সর্বসাধারণের মধ্যে সঞ্চারিত করিয়া দিবার জন্য নানাবিধ ছোটোেবড়ো প্ৰণালী বিস্তারিত করিয়া দিয়াছে। এইজন্য ভারতবর্ষে ধনী যাহা ভোগ করে নানা উপলক্ষে সর্বসাধারণে তাহার অংশ পায় এবং জনসাধারণকে আশ্রয় দিয়া ও পরিতুষ্ট করিয়াই ক্ষমতাশালীর ক্ষমতা খ্যাতিলাভ করে । আমাদের দেশে ধনী দরিদ্রের প্রচণ্ড সংঘাতের কোনো কারণ নাই, এবং অক্ষমকে আইনের দ্বারা বঁাচাইয়া রাখিবারও বিশেষ প্রয়োজন ঘটে নাই । পাশ্চাত্যসমাজ পারিবারিক সমাজ নাহে ; তাহা জনসমাজ, তাহা আমাদের সমাজের চেয়ে ব্যাপ্ত । ঘরের মধ্যে ততটা পরিমাণে সে নাই যতটা পরিমাণে সে বাহিরে আছে। আমাদের দেশে পরিবার বলিতে যে জিনিস বোঝায় তাহা যুরোপে বঁধে নাই বলিয়াই য়ুরোপের মানুষ ছড়াইয়া পড়িয়ছে। এই ছড়াইয়া-পড়া সমাজের স্বভাবই এই- এক দিকে তাহার বাধন যেমন আলগা আর-এক দিকে তাহা তেমনি বিচিত্র ও দৃঢ় হইয়া পড়ে । তাহা গদ্যরচনার মতো। পদ্য ছন্দের সংকীর্ণ সীমার মধ্যে বদ্ধ হইয়া চলে বলিয়া তাহার ধাধনটি সহজ ; কিন্তু গদ্য ছড়াইয়া পড়িয়ছে, এইজন্যই এক দিকে সে মুক্মিণীক দিকে তাহার পক্ষেপ বুলি আর সিবিকাশের বিচিত্র নিয়মের দ্বারা, বড়ো ইংরেজি সমাজ বিস্তৃত ক্ষেত্রে আছে বলিয়া এবং তাহার সমস্ত কারবারকে বাহিরে প্রসারিত করিয়া ফঁাদিতে হইয়াছে বলিয়াই, নানা সামাজিক বিধানের দ্বারা তাহাকে সকল সময়েই প্ৰস্তুত থাকিতে হইয়াছে। অটসীেরে কাপড় পরিবার সময় তাহার অল্প। তাহাকে সাজিয়া থাকিতে হয়, কেননা সে আীয়সমাজে নাই। আমীয়েরা ক্ষমা করে, সহ্য করে, কিন্তু বাহিরের লোকের কাছে প্রশ্লয় প্রত্যাশা করা যায় না। প্ৰত্যেককে প্রত্যেক কাজে ঠিক সময়মত চলিতেই হয়, নহিলে পরস্পর পরস্পরের ঘাড়ে আসিয়া পড়িবে। রেলের লাইন যদি আমার একলার হয় অথবা আমার গুটিকয়েক ভাইকছুর অধিকারে থাকে, তাহা হইলে যেমন খুশি গাড়ি ঢালাইতে পারি এবং পরস্পরের গাড়িকে ইচ্ছমত যেখানে-সেখানে যখন তখন দাঁড় করাইয়া রাখিতে পারি। কিন্তু, সাধারণের রেলের রান্তায় যেখানে