পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

· ዋሺ.. ቕቫቑ"g tebb টাকা দিয়া কিনিয়া বা আংশিক ভাবে গ্ৰহণ করিতে পারি না ; তাহা স্নেহ প্ৰেম ভক্তির দ্বারাই আমরা আত্মসাৎ করিতে পারি ; তাহাই মনুষ্যত্বের পাকযন্ত্রের জারক রস ; তাহাঁই জৈব সামগ্ৰীকে জীবনের সঙ্গে সম্মিলিত করিতে পারে। বর্তমান কালে আমাদের দেশের শিক্ষায় সেই গুরুর জীবনই সকলের চেয়ে অত্যাবশ্যক হইয়াছে। শিশুবয়সে নিজীব শিক্ষার মতো ভয়ংকর ভার আর-কিছুই নাই ; তাহা মনকে যতটা দেয় তাহার চেয়ে পিষিয়া বাহির করে অনেক বেশি । আমাদের সমাজব্যবস্থায় আমরা সেই গুরুকে খুজিতেছি যিনি আমাদের জীবনকে গতিদান করবেন ; আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা সেই গুরুকে খুঁজিতেছি যিনি আমাদের চিত্তের গতিপথকে বাধামুক্ত করবেন। যেমন করিয়া হউক, সকল দিকেই আমরা মানুষকে চাই ; তাহার পরিবর্তে প্ৰণালীর বটিক গিলাইয়া কোনো কবিরাজ আমাদিগকে রক্ষা করিতে পরিবেন না । চ্যালিফোর্ড vey 2efKo, yeye लश्का ७ शिका আমার কোনো-এক বন্ধু’ ফলিত জ্যোতিষ লইয়া আলোচনা করেন । তিনি একবার আমাকে বলিয়াছিলেন যে-সব মানুষ বিশেষ কিছুই নহে, যাহাদের জীবনেই এবং না জিনিসটা খুব স্পষ্ট করিয়া দাগ নাই, জ্যোতিবের গণনা তাহদের সম্বন্ধে ঠিক দিশ পায় না। তাহদের সম্বন্ধে শুভগ্রহ ও অশুভগ্রহের ফল কী তাহা হিসাবের মধ্যে আনা কঠিন । বাতাস যখন জোরে বহে তখন পালের জাহাজ হুহু করিয়া দুই দিনের রাস্তা এক দিনে চলিয়া যাইবে, এ কথা বলিতে সময় লাগে না ; কিন্তু, কাগজের নীেকাটা এলোমেলো ঘুরিতে থাকিবে কি ডুবিয়া যাইবে, কি কী হইবে তাহা বলা যায় নাযাহার বিশেষ কোনো-একটা বন্দর নাই তাহার অতীতই বা কী আর ভবিষ্যৎই বাকী । সে কিসের জন্য প্ৰতীক্ষা করিবে, কিসের জন্য নিজেকে প্ৰস্তুত করবে। তাহার আশা-তাপমানযন্ত্রে দুরাশার উচ্চতম রেখা অন্য দেশের নৈরাশ্যরেখার কাছাকাছি । আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে এই অবস্থাটাই সবচেয়ে সাংঘাতিক অবস্থা। আমাদের জীবনে সুস্পষ্টতা নাই। আমরা যে কী হইতে পারি, কতদূর আশা করিতে পারি, তাহা বেশ মোটা লাইনে বড়ো রেখায় দেশের কোথাও আঁকা নাই। আশা করিবার অধিকারই মানুষের শক্তিকে প্ৰবল করিয়া তোলে। প্রকৃতির গৃহিণীপনায় শক্তির অপব্যয় ঘটিতে পারে না, এইজন্য আশা যেখানে নাই শক্তি সেখানে হইতে বিদায় গ্রহণ করে। বিজ্ঞানশাস্ত্ৰে বলে, চক্ষুন্মান প্রাণীরা যখন দীর্ঘকাল গুহাবাসী হইয়া থাকে তখন তাহারা দৃষ্টিশক্তি হারায়। আলোক থাকিবে না। অথচ দৃষ্টি থাকিবে এই অসংগতি যেমন প্রকৃতি সহিতে পারে না, তেমনি আশা নাই। অথচ শক্তি আছে ইহাও প্রকৃতির পক্ষে অসহ্য। এইজন্য বিপদের মুখে পলায়নের যখন উপায় নাই, পলায়নের শক্তিও তখন আড়ষ্ট হইয়া পড়ে। এই কারণে দেখা যায়, আশা করিবার ক্ষেত্র বড়ো হইলেই মানুষের শক্তিও বড়ো হইয়া বাড়িয়া ওঠে । শক্তি তখন স্পষ্ট করিয়া পথ দেখিতে পায় এবং জোর করিয়া পা ফেলিয়া চলে। কোনো সমাজ সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস যাহা মানুষকে দিতে পারে তাহা সকলের চেয়ে বড়ো আশা। সেই আশার পূর্ণ সফলতা সমাজের প্রত্যেক লোকেই যে পায় তাহা নহে; কিন্তু নিজের গোচরে এবং অগোচরে সেই আশার অভিমুখে সর্বদাই একটা তাগিদ থাকে বলিয়াই প্রত্যেকের শক্তি তাহার নিজের সাধের শেষ পর্যন্ত অগ্রসর হইতে পারে। একটা জাতির পক্ষে সেইটেই সকলের চেয়ে মন্ত কথা । ১ খ্রিয়নাথ সেন। “প্রিয়-পুষ্পাঞ্জলি গ্রন্থের “ফলিত জ্যোতিষী" প্ৰবন্ধ স্রষ্টব্য।