পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vo রবীন্দ্র-রচনাবলী পুরোনো নীলকুঠি” তখনো খাড়া ছিল। পদ্মা ছিল দূরে। নীচের তলায় কাছারি, উপরের তলায় আমাদের থাকবার জায়গা । সামনে খুব মন্ত একটা ছাদ । ছাদের বাইরে বড়ো বড়ো ঝাউগাছ, এরা একদিন নীলকর সাহেবের ব্যাবসার সঙ্গে বেড়ে উঠেছিল। আজ কুঠিয়াল সাহেবের দাবরাব একেবারে থম থম করছে। কোথায় নীলকুঠির যমের দূত সেই দেওয়ান, কোথায় লাঠি-কঁধে কোমর-বাধা পেয়াদার দল, কোথায় লম্বা-টেবিল-পাতা খানার ঘর, যেখানে ঘোড়ায় চড়ে সদর থেকে সাহেবরা এসে রাতকে দিন করে দিত- ভোজের সঙ্গে চলত জুড়ি-নৃত্যের ঘূর্ণিপাক, রক্তে ফুটতে থাকত শ্যাস্পেনের নেশা, হতভাগা রায়তদের দোহাই পাড়া কান্না উপরওয়ালদের কানে পৌঁছত না, সদর জেলখানা পর্যন্ত তাদের শাসনের পথ লম্বা হয়ে চলত। সেদিনকার আর যা-কিছু সব মিথ্যে হয়ে গেছে, কেবল সত্য হয়ে আছে দুই সাহেবের দুটি গোর। লম্বা লম্বা ঝাউগাছগুলি দোলাদুলি করে বাতাসে, আর সেদিনকার রায়তদের নাতি-নাতনিরা কখনো কখনো দুপুররাত্রে দেখতে পায় সাহেবের ভূত বেড়াচ্ছে কুঠিবাড়ির পোড়ো বাগানে । একলা থাকার মন নিয়ে আছি । ছোটো একটি কোণের ঘর, যত বড়ো ঢালা ছাদ তত বড়ো ফলাও আমার ছুটি । অজানা ভিন দেশের ছুটি, পুরোনো দিঘির কালো জলের মতো তার থই পাওয়া যায় না । বউ-কথা-কও ডাকছে তো ডাকছেই, উড়ো ভাবনা ভাবছি তো ভাবছিই । এই সঙ্গে সঙ্গে আমার খাতা ভরে উঠতে আরম্ভ করেছে পদ্যে । সেগুলো যেন ঝরে পড়বার মুখে মাঘের প্রথম ফসলের আমের বোল । ঝরেও গেছে । তখনকার দিনে অল্প বয়সের ছেলে, বিশেষত মেয়ে, যদি অক্ষর গুণে দু ছত্র পদ্য লিখিত তা হলে দেশের সমাজদাররা ভাবত, এমন যেন আর হয় না, কখনো হবে না । সে-সব মেয়ে-কবিদের নাম দেখেছি, কাগজে তাদের লেখাও বেরিয়েছে । তার পরে সেই অতি সাবধানে চোদ্দ অক্ষর বঁচিয়ে লেখা ভালো ভালো কথা আর কঁচা কঁচা মিল যেই গেল মিলিয়ে, অমনি তাদের সেই নাম-মোছা পটে আজকালকার মেয়েদের সারি সারি নাম উঠছে ফুটে । ছেলেদের সাহস মেয়েদের চেয়ে অনেক কম, লজা অনেক বেশি । সেদিন ছোটো বয়সের ছেলে-কবি কবিতা লিখেছে মনে পড়ে না, এক আমি ছাড়া । আমার চেয়ে বড়ো বয়সের এক ভাগনে একদিন বাৎলিয়ে দিলেন চোদ্দ অক্ষরের ছাচে কথা ঢাললে সেটা জমে ওঠে পদ্যে। স্বয়ং দেখলুম এই জাদুবিদ্যের ব্যাপার। আর হাতে হাতে সেই চোদ্দ অক্ষরের ছাদে পদ্মও ফুটিল ; এমনকি, তার উপরে ভ্রমরও বসবার জায়গা পেল । কবিদের সঙ্গে আমার তফাত গেল ঘুচে, সেই অবধি এই তফাত ঘুচিয়েই চলেছি। মনে আছে, ছাত্রবৃত্তির নীচের ক্লাসে যখন পড়ি সুপারিন্টেন্ডেন্ট গোবিন্দবাবু গুজব শুনলেন যে, আমি কবিতা লিখি। আমাকে ফরমাশ করলেন লিখতে, ভাবলেন নর্মাল স্কুলের নাম উঠবে জ্বলজ্বলিয়ে। লিখতে হল, শোনাতেও হল ক্লাসের ছেলেদের, শুনতে হল যে এ লেখাটা নিশ্চয় চুরি। নিন্দুকরা জানতে পারে নি, তার পরে যখন সেয়ানা হয়েছি তখন ভাব-চুরিতে হাত পাকিয়েছি। কিন্তু এ চোরাই মালগুলো দামি জিনিস । মনে পড়ে পয়ারে ত্রিপদীতে মিলিয়ে একবার একটা কবিতা বানিয়েছিলুম, তাতে এই দুঃখ জানিয়েছিলুম যে, সীতার দিয়ে পদ্ম তুলতে গিয়ে নিজের হাতের ঢেউয়ে পদ্মটা সরে সরে যায়, তাকে ধরা যায় না। অক্ষয়বাবু তার আমীয়দের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই কবিতা শুনিয়ে বেড়ালেন ; আমীয়রা বললেন, ছেলেটির লেখবার হাত আছে । r বউঠাকরুনের ব্যবহার ছিল উলটাে। কোনোকালে আমি যে লিখিয়ে হব, এ তিনি কিছুতেই মানতেন না । কেবলই খোঁটা দিয়ে বলতেন, কোনোকালে বিহারী চক্রবতীর মতো লিখতে পারব না। আমি S uuS SDuDuBSLBLBBB DBDDSS DuuSODBDDS TDBB gg S Csifzsgrepe Izrrieg)