পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ఫిe> বনোয়ারি ঐ কথাই শুনিয়া আসিয়াছে যে, নীলকণ্ঠ অন্যকে ষে পরিমাণে বঞ্চিত করিতেছে নিজের ঘরে তাছার ততোধিক পরিমাণে সঞ্চিত হইয়া উঠিতেছে। অথচ দুই পক্ষে এই-যে সব বিরোধ জমা হইয়া উঠিয়াছে তাহ সামান্ত পাচ-দশ টাকা লইয়া। নীলকণ্ঠের বিষয়বুদ্ধির অভাব নাই— এ কথা তাহার পক্ষে বুঝা কঠিন নহে যে, বনোয়ারির সঙ্গে বনাইয়া চলিতে ন পারিলে কোনো-না-কোনো দিন তাহার বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা। কিন্তু, মনিবের ধন সম্বন্ধে নীলকণ্ঠের একটা কৃপণতার বায়ু আছে । সে যেটাকে অন্যায্য মনে করে মনিবের হুকুম পাইলে ও কিছুতেই তাহা সে খরচ করিতে পারে না । এদিকে বনোয়ারির প্রায়ই অন্যায্য খরচের প্রয়োজন ঘটিতেছে । পুরুষের অনেক অন্যায্য ব্যাপারের মূলে যে কারণ থাকে সেই কারণটি এখানেও খুব প্রবলভাবে বর্তমান। বনোয়ারির স্ত্রী কিরণলেখার সৌন্দর্য সম্বন্ধে নানা মত থাকিতে পারে, তাহ লইয়া আলোচনা করা নিম্প্রয়োজন । তাহার মধ্যে যে মতটি বনোয়ারির, বর্তমান প্রসঙ্গে একমাত্র সেইটেই কাজের। বস্তুত স্ত্রীর প্রতি বনোয়ারির মনের যে পরিমাণ টান সেটাকে বাড়ির অন্যান্য মেয়েরা বাড়াবাড়ি বলিয়াই মনে করে। অর্থাৎ, তাহারা নিজের স্বামীর কাছ হইতে যতট। অাদর চায় অথচ পায় না, ইহা ততটা। o কিরণলেখার বয়স যতই হউক চেহারা দেখিলে মনে হয় ছেলেমানুষটি। বাড়ির বড়োবউয়ের যেমনতর গিরিবান্নি ধরনের আকৃতি-প্রকৃতি হওয়া উচিত সে তাহার একেবারেই নহে। সব মৃদ্ধ জড়াইয়। সে যেন বড়ো স্বল্প । বনোয়ারি তাহাকে আদর করিয়া অণু বলিয়া ডাকিত। যখন তাহাভেও কুলাইত না তখন বলিভ পরমাণু। রসায়নশাস্ত্রে যাহাদের বিচক্ষণতা আছে তাহারা জানেন, বিশ্বঘটনায় অণুপরমাণুগুলির শক্তি বড়ো কম নয় । কিরণ কোনোদিন স্বামীর কাছে কিছুর জন্ত আবদার করে নাই। তাহার এমন একটি উদাসীন ভাব, যেন তাহার বিশেষ কিছুতে প্রয়োজন নাই । বাড়িতে তাহার অনেক ঠাকুরবি, অনেক ননদ ; তাহাদিগকে লইয়। সর্বদাই তাহার সমস্ত মন ব্যাপৃত ; নবযৌবনের নবজাগ্রত প্রেমের মধ্যে ষে একটা নির্জন তপস্তা আছে তাহাতে তাহার তেমন প্রয়োজন-বোধ নাই। এইজন্য বনোয়ারির সঙ্গে ব্যবহারে তাহার বিশেষ একটা আগ্রহের লক্ষণ দেখা যায় না। যাহা সে বনোয়ারির কাছ হইতে পায় তাহা সে শাস্তভাবে গ্রহণ করে, অগ্রসর হইয়া কিছু চায় না। তাহার ফল হইয়াছে এই যে, স্ত্রীটি কেমন করিয়া খুশি হইবে সেই কথা বনোয়ারিকে নিজে ভাবিয়া বাহির করিতে হয়। স্ত্রী যেখানে নিজের মুখে ফরমাশ করে সেখানে সেটাকে তর্ক কৰিয়া কিছু-না-কিছু খর্ব করা ২৩| ১৪