পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२»8 রবীন্দ্র-রচনাবলী হইতে বাচাইয়া রাখিতে পারিলে তবে রক্ষা। এইরূপে বংশীর ছেলেটিকে ষত্ব করিবার পথ বনোয়ারির পক্ষে বেশ স্বাভাবিক হইল না। বাড়ির সকলের অাদরে ক্রমে ছেলেটি বড়ো হইয়া উঠিতে লাগিল । তাহার নাম হইল হরিদাস । এত বেশি আদরের আওতায় সে যেন কেমন ক্ষীণ এবং ক্ষণভঙ্গুর আকার ধারণ করিল। তাগ-তাবিজ-মাদুলিতে তাহার সর্বাঙ্গ আচ্ছন্ন, রক্ষকের দল সর্বদাই তাহাকে ঘিরিয়া । ইহার র্যাকে ফঁাকে মাঝে মাঝে বনোয়ারির সঙ্গে তাহার দেখা হয় । জ্যাঠামশায়ের ঘোড়ায় চড়িবার চাবুক লইয়া আস্ফালন করিতে সে বড়ে ভালোবাসে । দেখা হইলেই বলে 'চাবু । বনোয়ারি ঘর হইতে চাবুক বাহির করিয়া আনিয়া বাতাসে সাই সাই শব্দ করিতে থাকে, তাহার ভারি আনন্দ হয় । বনোয়ারি এক-একদিন তাহাকে আপনার ঘোড়ার উপর বসাইয়া দেয়, তাহাতে বাড়িমৃদ্ধ লোক একেবারে ই-ই করিয়া ছুটিয়া আসে। বনোয়ারি কখনো কখনো আপনার বন্দুক লইয়। তাহার সঙ্গে খেলা করে, দেখিতে পাইলে কিরণ ছুটিয়া আসিয়া বালককে সরাইয়া লইয়া যায়। কিন্তু, এই-সকল নিষিদ্ধ আমোদেই হরিদাসের সকলের চেয়ে অনুরাগ । এই জন্য সকল প্রকার বিপ্ন-সত্ত্বে জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে তাহার খুব ভাব হইল । বহুকাল অব্যাহতির পর এক সময়ে হঠাৎ এই পরিবারে মৃত্যুর আনাগোনা ঘটিল। প্রথমে মনোহরের স্ত্রীর মৃত্যু হইল। তাহার পরে নীলকণ্ঠ যখন কতার জন্ত বিবাহের পরামর্শ ও পত্রিীর সন্ধান করিতেছে এমন সময় বিবাহের লগ্নের পূর্বেই মনোহরের মৃত্যু হইল। তখন হরিদাসের বয়স আট। মৃত্যুর পূর্বে মনোহর বিশেষ করিয়া তাহার ক্ষুদ্র এই বংশধরকে কিরণ এবং নীলকণ্ঠের হাতে সমর্পণ করিয়া গেলেন ; বনোয়ারিকে কোনো কথাই বলিলেন না । বাক্স হইতে উইল যখন বাহির হইল তখন দেখা গেল, মনোহর তাঙ্কার সমস্ত সম্পত্তি হরিদাসকে দিয়া গিয়াছেন। বনোয়ারি যাবজ্জীবন দুই শত টাকা করিয়া মাসস্থারা পাইবেন । নীলকণ্ঠ উইলের একৃজিকু্যটর, তাহার উপরে ভার রহিল, সে যতদিন বঁাচে হালদার-পরিবারের বিষয় এবং সংসারের ব্যবস্থা সেই করিবে । বনোয়ারি বুঝিলেন, এ পরিবারে কেহ তাহাকে ছেলে দিয়া ও ভরসা পায় না, বিষয় দিয়াও না । তিনি কিছুই পারেন না, সমস্তই নষ্ট করিয়া দেন, এ সম্বন্ধে এ বাড়িতে কাহারো দুই মত নাই । অতএব, তিনি বরাদমতো আহার করিয়া কোণের ঘরে নিদ্রা দিবেন, র্তাহার পক্ষে এইরূপ বিধান । তিনি কিরণকে বলিলেন, “আমি নীলকণ্ঠের পেনসন খাইয়া বাচিব না। এ বাড়ি ছাড়িয়া চলে আমার সঙ্গে কলিকাতায় ।”