পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२० রবীন্দ্র-রচনাবলী সেই রাত্রেই বনোয়ারির আর দেখা নাই । কেবল সে একছত্র চিঠি লিখিয়া গেছে যে, সে চাকরি খুজিতে বাহির হইল । বাপের শ্রাদ্ধ পর্যন্ত সে অপেক্ষা করিল না ! দেশ মৃদ্ধ লোক তাই লইয়া তাহাকে ধিক্ ধিক্ করিতে লাগিল । বৈশাখ, ১৩২১ হৈমন্তী কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাছিলেন না । তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টা ও পার হইয়া যাইবে । মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয় গেছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিং উপরে অাছে, সেইজন্যই তাড়া । আমি ছিলাম বর । সুতরাং, বিবাহসম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল । আমার কাজ আমি করিয়াছি, এফ-এ পাশ করিয়া বৃত্তি পাইয়াছি। তাই প্রজাপতির দুই পক্ষ, কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষ ঘন ঘন বিচলিত হইয় উঠিল । আমাদের দেশে যে-মানুষ একবার বিবাহ করিয়াছে বিবাহ সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো উদবেগ থাকে না । নরমাংসের স্বাদ পাইলে মানুষের সম্বন্ধে বাঘের যে দশা হয়, স্ত্রীর সম্বন্ধে তাহার ভাবটা সেইরূপ হইয়া উঠে। অবস্থা যেমনি ও বয়স যতই হউক, স্ত্রীর অভাব ঘটিবামাত্র তাহ পূরণ করিয়া লইতে তাহার কোনো দ্বিধা থাকে না। যত দ্বিধা ও দুশ্চিস্তা সে দেখি আমাদের নবীন ছাত্রদের। বিবাহের পৌনঃপুনিক প্রস্তাবে তাহদের পিতৃপক্ষের পাকা চুল কলপের আশীর্বাদে পুনঃপুন কাচা হইয়া উঠে, আর প্রথম ঘটকালির অঁাচেই ইহাদের কাচা চুল ভাবনায় একরাত্রে পাকিবার উপক্রম হয় । সত্য বলিতেছি, আমার মনে এমন বিষম উদবেগ জন্মে নাই । বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনের মধ্যে যেন দক্ষিনে হাওয়া দিতে লাগিল। কৌতুহলী কল্পনার কিশলয়গুলির মধ্যে একটা যেন কানাকানি পড়িয়া গেল। যাহাকে বার্কের ফ্রেঞ্চ রেভোলুশনের নোট পাঁচ-সাত খাতা মুখস্থ করিতে হইবে, তাহার পক্ষে এ ভাবটা দোষের। আমার এ লেখা দি টেক্সটবুক্‌-কমিটির অনুমোদিত হইবার কোনো আশঙ্কা থাকিত তবে সাবধান হইতাম ।