পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচষ্ট २२१ প্রবীণাত্মা বলিলেন, “কুষ্টিতে কি আর ফাকি চলে না।” এই লইয়া ঘোর তর্ক, এমন-কি, বিবাদ হইয়া গেল । এমন সময়ে সেখানে হৈম আসিয়া উপস্থিত। কোনো-এক দিদিম জিজ্ঞাসা করিলেন, “নাতবউ, তোমার বয়স কত বলে তো ।” মা তাহাকে চোখ টিপিয়া ইশারা করিলেন । হৈম তাহার অর্থ বুঝিল না ; ৰলিল, *সতেরো ।” মা ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “তুমি জান না।” হৈম কহিল, “আমি জানি, আমার বয়স সতেরো।” দিদিমারা পরস্পর গা-টেপাটেপি করিলেন । বধুর নির্ব দ্বিতায় রাগিয়া উঠিয়া মা বলিলেন, “তুমি তো সব জান ! তোমার বাবা যে বলিলেন, তোমার বয়স এগার ।” হৈম চমকিয়া কহিল, “বাবা বলিয়াছেন ? কখনো না।” মা কহিলেন, “অবাক করিল । বেহাই আমার সাম্নে নিজের মুখে বলিলেন, আর মেয়ে বলে কখনো না' !” এই বলিয়া আর-একবার চোপ টিপিলেন ! এবার হৈম ইশারার মানে বুঝিল । স্বর আরো দৃঢ় করিয়া বলিল, “বাবা এমন কথ। কখনোই বলিতে পারেন না।” মা গলা চড়াইয়া বলিলেন, “তুই আমাকে মিথ্যাবাদী বলিতে চাস ?” হৈম বলিল, “আমার বাবা তো কখনোই মিথ্যা বলেন না।” ইহার পরে মা যতই গালি দিতে লাগিলেন কথাটার কালি ততই গড়াইয়া ছড়াইয়া চারি দিকে লেপিয়া গেল । মা রাগ করিয়া বাবার কাছে তাহার বধূর মুঢ়তা এবং ততোধিক একগুয়েমির কথা বলিয়া দিলেন । বাবা হৈমকে ডাকিয়া বলিলেন, “আইবড়ো মেয়ের বয়স সতেরো, এটা কি খুব একটা গৌরবের কথা, তাই ঢাক পিটিয়া বেড়াইতে হইবে ? আমাদের এখানে এ-সব চলিবে না, বলিয়া রাখিতেছি।” 4. হায় রে, তাহার বউমার প্রতি বাবার সেই মধুমাখা পঞ্চম স্বর আজ একেবারে এমন বাজধাই খাদে নাবিল কেমন করিয়া । হৈম ব্যথিত হইয়া প্রশ্ন করিল, “কেহ যদি বয়স জিজ্ঞাসা করে কী বলিব ।” বাবা বলিলেন, "মিথ্যা বলিবার দরকার নাই, তুমি বলিয়ো ‘আমি জানি না, আমার শাশুড়ি জানেন ।” কেমন করিয়া মিথ্যা বলিতে না হয় সেই উপদেশ শুনিয়া হৈম এমন ভাবে