পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§ 98 রবীন্দ্র-রচনাবলী বোষ্টমী আমি লিখিয়া থাকি অথচ লোকরঞ্জন আমার কলমের ধর্ম নয়, এই জন্য লোকেও আমাকে সদাসর্বদা যে রঙে রঞ্জিত করিয়া থাকে তাহাতে কালির ভাগই বেশি । আমার সম্বন্ধে অনেক কথাই শুনিতে হয় ; কপালক্রমে সেগুলি হিতকথা নয়, মনোহারী তো নহেই । শরীরে যেখানটায় ঘা পড়িতে থাকে সে জায়গাটা যত তুচ্ছই হোক সমস্ত দেহটাকে বেদনার জোরে সেই ছাড়াইয়া যায়। যে লোক গালি খাইয়া মানুষ হয়, সে আপনার স্বভাবকে যেন ঠেলিয়া একঝে*াকা হইয়া পড়ে । আপনার চারিদিককে ছাড়াইয়া আপনাকেই কেবল তাহার মনে পড়ে— সেটা আরামও নয়, কল্যাণও নয়। আপনাকে ভোলাটাই তো স্বস্তি । আমাকে তাই ক্ষণে ক্ষণে নির্জনের খোজ করিতে হয় । মানুষের ঠেলা থাইতে খাইতে মনের চারি দিকে যে টোল খাইয়া যায়, বিশ্ব প্রকৃতির সেবানিপুণ হাতখানির গুণে তাহা ভরিয়া উঠে । কলিকাতা হইতে দূরে নিভৃতে আমার একটি অজ্ঞাতবাসের আয়োজন আছে 5 আমার নিজ-চর্চার দৌরাত্ম্য হইতে সেইখানে অন্তধর্ণন করিয়া থাকি । সেখানকার লোকেরা এখনো আমার সম্বন্ধে কোনো একটা সিদ্ধাস্তে আসিয়া পৌছে নাই । তাহার। দেখিয়াছে— আমি ভোগী নই, পল্লীর রজনীকে কলিকাতার কলুষে আবিল করি না; আবার যোগী ও নই, কারণ দূর হইতে আমার ধেটুকু পরিচয় পাওয়া যায় তাহার মধ্যে ধনের লক্ষণ আছে ; আমি পথিক নহি, পল্লীর রাস্তায় ঘুরি বটে কিন্তু কোথাও পোছিবার দিকে আমার কোনো লক্ষই নাই ; আমি যে গৃহী এমন কথা বলা ও শক্ত, কারণ ঘরের লোকের প্রমাণাভাব । এই জন্য পরিচিত জীবশ্রেণীর মধ্যে আমাকে কোনো একটা প্রচলিত কোঠায় না ফেলিতে পারিয়া গ্রামের লোক আমার সম্বন্ধে চিস্থ করা একরকম ছাড়িয়া দিয়াছে, আমি ও নিশ্চি স্ত আছি । অল্পদিন হইল খবর পাইয়াছি, এই গ্রামে একজন মানুষ আছে যে আমার সম্বন্ধে কিছু-একটা মনে ভাবিয়াছে, অস্তত বোকা ভাবে নাই । তাহার সঙ্গে প্রথম দেখা হইল, তখন আষাঢ়মাসের বিকালবেলা। কান্না শেষ হইয়া গেলেও চোখের পল্লব ভিজা থাকিলে যেমন ভাবটা হয়, সকালবেলাকার বৃষ্টি-অবসানে সমস্ত লতাপাত আকাশ ও বাতাসের মধ্যে সেই ভাবটা ছিল। আমাদের পুকুরের উচু পাড়িটার উপর দাড়াইয়া আমি একটি নধর-খামল গাভীর ঘাস খাওয়া দেপিতে