পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

《는 রবীন্দ্র-রচনাবলী একে অনাবশুক আবার তার উপরে তাকে ভোলাও শক্ত, সেইজন্যে অঁাস্তাকুঁড়েও তার স্থান নেই। অথচ বিন্দুর খুড়ততে ভাইরা যে জগতে পরমাবশ্বক পদার্থ তা বলবার জো নেই। কিন্তু, তারা বেশ আছে । তাই, বিন্দুকে যখন আমার ঘরে ডেকে আনলুম, তার বুকের মধ্যে র্কাপতে লাগল। তার ভয় দেখে আমার বড়ো দুঃখ হল । আমার ঘরে যে তার একটুখানি জায়গা আছে, সেই কথাটি আমি অনেক আদর করে তাকে বুঝিয়ে দিলুম। কিন্তু, আমার ঘর শুধু তো আমারই ঘর নয়। কাজেই আমার কাজটি সহজ হল না । দু-চারদিন আমার কাছে থাকতেই তার গায়ে লাল-লাল কৗ উঠল, হয়তো সে ঘামাচি, নয় তো আর-কিছু হবে । তোমরা বললে বসন্ত । কেননা, ও ষে বিন্দু। তোমাদের পাড়ার এক আনাড়ি ডাক্তার এসে বললে, আর দুই-একদিন না গেলে ঠিক বলা যায় না। কিন্তু সেই দুই-একদিনের সবুর সইবে কে। বিন্দু তো তার ব্যামোর লজ্জাতেই মরবার জো হল । আমি বললুম, বসন্ত হয় তো হোক, আমি আমাদের সেই আতুড়ঘরে ওকে নিয়ে থাকব, আর-কাউকে কিছু করতে হবে না। এই নিয়ে আমার উপরে তোমরা যখন সকলে মারমূর্তি ধরেছ, এমন-কি বিন্দুর দিদিও যখন অত্যন্ত বিরক্তির ভান করে পোড়াকপালি মেয়েটাকে হাসপাতালে পাঠাবার প্রস্তাব করছেন, এমন সময় ওর গায়ের সমস্ত লাল দাগ একদম মিলিয়ে গেল । তোমরা দেখি তাতে আরও ব্যস্ত হয়ে উঠলে । বললে, নিশ্চয়ই বসন্ত বলে গিয়েছে। কেননা, ও যে বিন্দু। অনাদরে মানুষ হবার একটা মস্ত গুণ শরীরটাকে তাতে একেবারে অজর অমর করে তোলে। ব্যামো হতেই চায় ন— মরার সদর রাস্তাগুলো একেবারেই বদ্ধ। রোগ তাই ওকে ঠাট্টা করে গেল, কিছুই হল না। কিন্তু, এটা বেশ বোঝা গেল, পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে অকিঞ্চিৎকর মানুষকে আশ্রয় দেওয়াই সব চেয়ে কঠিন । আশ্রয়ের দরকার তার যত বেশি আশ্রয়ের বাধাও তার তেমনি বিষম | আমার সম্বন্ধে বিন্দুর ভয় যখন ভাঙল তখন ওকে আর-এক গেরোয় ধরল। আমাকে এমনি ভালোবাসতে শুরু করলে যে, আমাকে ভয় ধরিয়ে দিলে। ভালোবাসার এরকম মূতি সংসারে তো কোনোদিন দেখি নি। বইয়েতে পড়েছি বটে, সেও মেয়েপুরুষের মধ্যে । আমার যে রূপ ছিল সে-কথা আমার মনে করবার কোনো কারণ বহুকাল ঘটে নি— এতদিন পরে সেই রূপটা নিয়ে পড়ল এই কুত্ৰ মেয়েটি। অামার মুখ দেখে তার চোখের আশ আর মিটত না । বলত, "দিদি, তোমার এই মুখখানি আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় নি।” বেদিন আমি নিজের চুল নিজে বাধতুম,