পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৬৭ ব্যাবসার সাত বছরের হিসাব দেখাইলাম। কোথায় তিসি কত পরিমাণে ৰায় ; কোথায় কত দর ; দর সব চেয়ে উঠেই বা কত, নামেই বা কত ; মাঠে ইহার দাম কত ; জাহাজের ঘাটে ইহার দাম কত ; চাষাদের ঘর হইতে কিনিয়া একদম সমুদ্রপারে চালান করিতে পারিলে এক লম্ফে কত লাভ হওয়া উচিত— কোথাও বা তাহা রেখা কাটিয়া, কোথাও বা তাহা শতকরা হিসাবের অঙ্কে ছকিয়া, কোথাও বা অতুলোম-প্রণালীতে, কোথাও বা প্রতিলোম-প্রণালীতে, লাল এবং কালো কালিতে, অতি পরিষ্কার অক্ষরে লম্বা কাগজের পাচ-সাত পৃষ্ঠা ভর্তি করিয়া যখন প্রসন্নর হাতে দিলাম তখন সে আমার পায়ের ধুলা লইতে যায় আর-কি। সে বলিল, “মনে বিশ্বাস ছিল, আমি এ সব কিছু কিছু বুঝি, কিন্তু আজ হইতে, দাদা, তোমার সাক্রেদ হইলাম।” আবার একটু প্রতিবাদও করিল। বলিল, “যে ধ্রুবাণি পরিত্যজ্য— মনে আছে তো ? কী জানি, হিসাবে ভুল থাকিতেও পারে।” আমার রোথ চড়িয়া গেল । ভুল ষে নাই, কাগজে কাগজে তাহার অকাট্য প্রমাণ বাড়িয়া চলিল। লোকসান যত প্রকারের হইতে পারে সমস্তকে সার বাধিয়া খাড়া করিয়াও, মুনফাকে কোনোমতেই শতকরা বিশ-পচিশের নিচে নামাইতে পারা গেল না। এমনি ৰুরিয়া দোকানদারির সরু খাল বাহিয়া কারবারের সমুদ্রে গিয়া যখন পড়া গেল তখন যেন সেটা নিতান্ত আমারই জেদবশত ঘটিল, এমনি একটা ভাব দেখা দিল । দায়িত্ব আমারই । একে দত্তবংশের সততা, তার উপরে স্বদের লোভ ; গচ্ছিত টাকা ফাপিয়া উঠিল । মেয়েরা গহনা বেচিয়া টাকা দিতে লাগিল । কাজে প্রবেশ করিয়া আর দিশা পাই না। প্ল্যানে যেগুলো দিব্য লাল এবং কালে কালর রেখায় ভাগ করা, কাজের মধ্যে সে বিভাগ খুজিয়া পাওয়া দায় । আমার প্ল্যানের রসভঙ্গ হয়, তাই কাজে স্বখ পাই না । অন্তরাত্মা স্পষ্ট বুঝিতে লাগিল, কাজ করিবার ক্ষমতা আমার নাই, অথচ সেটা কবুল করিবার ক্ষমতাও আমার নাই । কাজটা স্বভাবত প্রসন্নর হাতেই পড়িল, অথচ আমিই যে কারবারের হর্তাকর্তা বিধাতা, এ ছাড়া প্রসন্নর মুখে আর কথাই নাই। তার মতলব এবং আমার স্বাক্ষর, তার দক্ষতা এবং আমার পৈতৃক খ্যাতি, এই দ্বইয়ে মিলিয়া ব্যাবসাটা চার পা তুলিয়া যে কোন পথে ছুটিতেছে ঠাহর করিতেই পারিলাম না । দেখিতে দেখিতে এমন জায়গায় আসিয়া পড়িলাম যেখানে তলও পাই না, কুলও দেখি না। তখন হাল ছাড়িয়া দিয়া যদি সত্য খবরটা ফাস করি তবে সততা রক্ষা হয়,