পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵԵ- রবীন্দ্র-রচনাবলী “বাবা, তোমার পায়ের উপরে এই পশমের শালট টেনে দিই— পায়ের ভেলো ঠাগু হয়ে গেছে।” “না, মালি, গায়ের উপর কিছু দিতে ভালো লাগছে না।” "জানিস, যতীন ? এই শালটা মণির তৈরি, এতদিন রান্ড জেগে জেগে সে তোমার জন্তে তৈরি করছিল। কাল শেষ করেছে।” যতীন শালটা লইয়া দুই হাত দিয়া একটু নাড়াচাড়া করিল। মনে হইল পশমের কোমলতা যেন মণির মনের জিনিস ; সে যে যতীনকে মনে করিয় রাত জাগিয়া এইটি বুনিয়াছে, তাহার মনের সেই প্রেমের ভাবনাটি ইহার সঙ্গে গাথা পড়িয়াছে। কেবল পশম দিয়া নহে, মণির কোমল আঙলের স্পর্শ দিয়া ইহা বোনা। তাই মাসি যখন শালটা তাহার পায়ের উপর টানিয়া দিলেন তখন তাহার মনে হইল, মণিই রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া তাহার পদসেবা করিতেছে । “কিন্তু, মালি, আমি তো জানতুম, মণি শেলাই করতে পারে না— সে শেলাই করতে ভালোই বাসে না।” “মন দিলে শিখতে কতক্ষণ লাগে । তাকে দেখিয়ে দিতে হয়েছে— ওর মধ্যে অনেক ভুল শেলাইও আছে।” “তা, ভুল থাকৃ-না। ও তো প্যারিস এক্‌জিবিশনে পাঠানো হবে না— ভুল শেলাই দিয়ে আমার পা ঢাকা বেশ চলৰে ।” শেলাইয়ে যে অনেক ভুল-ত্রুটি আছে সেই কথা মনে করিয়াই যতীনের আরও বেশি আনন্দ হইল। বেচারা মণি পারে না, জানে না, বারবার ভুল করিতেছে, তবু ধৈর্য ধরিয়া রাত্রির পর রাত্রি শেলাই করিয়া চলিয়াছে— এই কল্পনাটি তাহার কাছে বড়ো করুণ, বড়ো মধুর লাগিল। এই ভুলে-ভরা শালটাকে আবার সে একটু নাড়িয়া-চাড়িয়া লইল। "মাসি, ডাক্তার বুঝি নিচের ঘরে ?” “হা, যতীন, আজ রাত্রে থাকবেন ।” “কিন্তু আমাকে যেন মিছামিছি ঘুমের ওষুধ দেওয়া না হয় । দেখেছ তো, ওতে আমার ঘুম হয় না, কেবল কষ্ট বাড়ে। আমাকে ভালো ক’রে জেগে থাকতে দাও । জান, মালি ? বৈশাখ-দ্বাদশীর রাত্রে আমাদের বিয়ে হয়েছিল—কাল সেই দ্বাদশী আসছে — কাল সেইদিনকার রাত্রের সব তারা আকাশে জালানো হবে। মণির বোধ হয় মনে নেই— আমি তাকে সেই কথাটি আজ মনে করিয়ে দিতে চাই; কেবল তাকে তুমি দ্ব মিনিটের জন্তে ডেকে দাও। চুপ করে রইলে কেন। বোধ হয় ডাক্তার তোমাদের