পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ՀՖԳ ইহার পরে শম্ভুনাথবাবুর ব্যবহারটাও নেহাত ঠাও। তার বিনয়টা অজস্র নয়। মুখে তো কথাই নাই। কোমরে চাদর বাধ, গলা ভাঙা, টাকপড়া, মিস কালে এবং বিপুল শরীর তার একটি উকিল বন্ধু যদি নিয়ত হাত জোড় করিয়া, মাথা হেলাইয়া, নম্রতার স্মিতহাস্তে ও গদগদ বচনে কন্সট পার্টির করতাল-বাজিয়ে হইতে শুরু করিয়া বরকর্তাদের প্রত্যেককে বার বার প্রচুররূপে অভিষিক্ত করিয়া ন দিতেন তবে গোড়াতেই একটা এস্পার-ওস্পার হইত। আমি সভায় বসিবার কিছুক্ষণ পরেই মাম শম্ভুনাথবাবুকে পাশের ঘরে ডাকিয় লইয়া গেলেন। কী কথা হইল জানি না, কিছুক্ষণ পরেই শম্ভুনাথবাবু আমাকে আসিয়া বলিলেন, “বাবাজি, একবার এই দিকে আসতে হচ্ছে ।” ব্যাপারখানা এই – সকলের না হউক, কিন্তু কোনো কোনো মাহুষের জীবনের একট-কিছু লক্ষ্য থাকে । মামার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, তিনি কোনোমতেই কারও কাছে ঠকিবেন না। তার ভয়, তার বেহাই তাকে গহনায় ফাকি দিতে পারেন— বিবাহকার্ধ শেষ হইয়া গেলে সে ফাকির অার প্রতিকার চলিবে না। বাড়িভাড়া, সওগাদ, লোকবিদায় প্রভৃতি সম্বন্ধে ধের কম টানাটানির পরিচয় পাওয়া গেছে তাহাতে মামা ঠিক করিয়াছিলেন, দেওয়া-থোওয়া সম্বন্ধে এ লোকটির শুধু মুখের কথার উপর ভর করা চলিবে না। সেইজন্য বাড়ির স্তাকুরীকে স্বদ্ধ সঙ্গে আনিয়াছিলেন । পাশের ঘরে গিন্না দেখিলাম, মামা এক তক্তপোষে এবং স্তাকরা তাহার দাড়িপাল্লা কষ্টিপাথর প্রভৃতি লইয়া মেজেয় বসিয়া আছে । শম্ভুনাথবাবু আমাকে বলিলেন, “তোমার মামা বলিতেছেন, বিবাহের কাজ শুরু হইবার আগেই তিনি কনের সমস্ত গহনা যাচাই করিয়া দেখিবেন, ইহাতে তুমি কী বল ।” আমি মাথা হেঁট করিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। মামা বলিলেন, “ও আবার কী বলিবে । আমি যা বলিব তাই হইবে।” শম্ভুনাথবাবু আমার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সেই কথা তবে ঠিক ? উনি ষা বলিবেন তাই হইবে ? এ সম্বন্ধে তোমার কিছুই বলিৰার নাই ?” আমি একটু ঘাড়-নাড়ার ইঙ্গিতে জানাইলাম, এসব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার ।

  • আচ্ছা তবে বোলো, মেয়ের গা হইতে সমস্ত গহনা খুলিয়া আনিতেছি।” এই

বলিয়া তিনি উঠিলেন। মামা বলিলেন, “অমুপম এখানে কী করিবে । ও সভায় গিয়া বস্বকৃ।” S) ●