পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ RSS বরযাত্রদের খাওয়া শেষ হইলে শম্ভুনাথবাবু আমাকে খাইতে বলিলেন । মামা বলিলেন, “সে কী কথা। বিবাহের পূর্বে বর খাইবে কেমন করিয়া।” এ সম্বন্ধে মামার কোনো মতপ্রকাশকে তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “তুমি কী বল। বসিয়া ধাইতে দোষ কিছু আছে ?” মূর্তিমতী মাতৃ-আজ্ঞা-স্বরূপে মামা উপস্থিত, তার বিরুদ্ধে চলা আমার পক্ষে অসম্ভব । আমি আহারে বসিতে পারিলাম না । তখন শম্ভুনাথবাবু মামাকে বলিলেন, “আপনাদিগকে অনেক কষ্ট দিয়াছি। আমরা ধনী নই, আপনাদের যোগ্য আয়োজন করিতে পারি নাই, ক্ষমা করিবেন। রাত হইয়া গেছে, আর আপনাদের কষ্ট বাড়াইতে ইচ্ছা করি না। এখন তবে—* মামা বলিলেন, “ত, সভায় চলুন, আমরা তো প্রস্তুত আছি।” শম্ভুনাথ বলিলেন, “তবে আপনাদের গাড়ি বলিয়া দিই?” মামা আশ্চর্য হুইয়া বলিলেন, “ঠাট্টা করিতেছেন নাকি ?” শম্ভুনাথ কহিলেন, “ঠাটা তে আপনিই করিয়া সারিয়াছেন। ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই ।” মামা দুইচোখ এতবড়ো করিয়া মেলিয়া অবাক হইয়া রহিলেন । শম্ভুনাথ কহিলেন, “আমার কস্তার গহনা আমি চুরি করিব, এ কথা যারা মনে করে তাদের হাতে আমি কন্যা দিতে পারি না।” আমাকে একটি কথা বলাও তিনি অবিশ্বক বোধ করিলেন না। কারণ, প্রমাণ হইয়া গেছে, আমি কেহই নই। 強 তার পরে যা হইল সে আমি বলিতে ইচ্ছা করি না। ঝাড়লণ্ঠন ভাঙিয়া-চুরিয়া, জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করিয়া, বরষাত্রের দল দক্ষযজ্ঞের পালা সারিয়া বাহির হইয়া গেল । বাড়ি ফিরিবার সময় ব্যাও রসনচৌকি ও কন্সট একসঙ্গে বাজিল না এবং অভ্রের ঝাড়গুলো আকাশের তারার উপর আপনাদের কর্তব্যের বরাত দিয়া কোথায় যে মহানির্বাণ লাভ করিল সন্ধান পাওয়া গেল না। WS) বাড়ির সকলে তো রাগিয়া আগুন । কস্তার পিতার এত গুমর | কলি যে চারপোয়া হইয়া আসিল ! সকলে বলিল, “দেখি, মেয়ের বিয়ে দেন কেমন করিয়া। কিন্তু মেয়ের বিয়ে হইবে না, এ ভয় যার মনে নাই তার শাস্তির উপায় কী। সমস্ত বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কস্তার বাপ বিবাহের